সাঁকো পেরিয়ে সেতুর নাগাল পেতে হয় লক্ষাধিক মানুষকে
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বোদা-তেপুকুরিয়া সড়কের সাহেবডোবা সেতুটি ভেঙে যায় প্রায় পাঁচ বছর আগে। এত দিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকলেও এটি সংস্কারে অথবা নতুন সেতু নির্মাণে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ।
সেতুটির এক পাড়ের আংশিক আর আরেক পাড়ের সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। ফলে ভাঙা অংশে সাঁকো জুড়ে দিয়ে চলাচল উপযোগী করে পাঁচ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দুপুরে সরজমিনে গেলে দেখা যায়, ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হচ্ছে স্থানীয় মানুষ ও পথচারীরা। এ সময় জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, জেলার বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম ইউনিয়নের বোদা-তেপুকুরিয়া সড়কের সাহেবডোবা সেতুটি পাঁচ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে। ২০১৭ সালে বর্ষার সময় পানিতে স্রোতে এর এক পাশের আংশিক ও আরেক অংশের ১৫ মিটার সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। কিছুদিন আগে ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সাহেব আলী ভাঙা অংশে বাঁশ ফেলে দিয়ে কোনোমতে চলাচল উপযোগী করেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভারী যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন বেংহারি বনগ্রাম, বড়শশী, মাড়েয়া ও কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করছে। এতে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এই ভাঙা সেতুর সাঁকো থেকে পড়ে গত বছর একজনের প্রাণহানিও হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
তারা আরও জানান, চার ইউনিয়নের কোনো মানুষ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হচ্ছে সাত-আট কিলোমিটার ঘুরে। তারা সেতুটি নির্মাণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য বর্তমান রেলপথমন্ত্রীকে জানালেও আশ্বাসে কেটে যায় পাঁচ বছর। ফলে দুর্ভোগে পড়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। দিন দিন সেতুটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন। তাই বর্ষার আগেই সেতুটি নির্মাণ করার দাবি জানান তারা।
এলাকাবাসী সুমন আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি ভেঙে থাকায় আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও কারও কোনো মাথাব্যথা নেই এ বিষয়ে। আমরা বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছি। কিন্তু সমস্যা সমাধান বা নতুন সেতু পাইনি। গেলে শুধু আশ্বাস পাই।
একই কথা বলেন বৃদ্ধ আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, প্রতিদিন সড়কের ওপর ভর করে লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে। দিন দিন সেতুটি নিচের দিকে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা। আমাদের দাবি, সরকার যেন দ্রুত একটি সেতু নির্মাণ করে আমাদের চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়।
বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব আলী বলেন, সেতুটি আজকের সমস্যা নয়, পাঁচ বছর আগে সেতুটি ভাঙে। সে সময় আমি চেয়ারম্যান ছিলাম না। কিন্তু আমি নিজ উদ্যোগে সেতুতে বাঁশ দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিই। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর সেতুটি নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। আশাবাদী শিগগিরই সেতুটি ভেঙে একটি নতুন সেতু নির্মাণ হবে।
বোদা উপজেলা প্রকৌশলী শামসুজ্জামান বলেন, সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে ভেঙে পড়ে আছে। আমরা সরেজমিনে দেখেছি। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সেতুটি নির্মাণের কথা থাকায় এত দিন উদ্যোগ নেয়নি এলজিইডি। তবে তারা সেতুটি নির্মাণ না করতে পারায় চলতি অর্থবছরের মধ্যে সেতুটি নির্মাণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন এই প্রকৌশলী।
এনএ