তিস্তার সেচ-সুবিধায় জ্বালানি ও সারে সাশ্রয় ১০৯ কোটি টাকা
তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় রংপুর বিভাগের তিন জেলায় খাল থেকে কৃষকদের পানি সরবরাহ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে চাষাবাদে কৃষকদের খরচ কমেছে, সঙ্গে বেড়েছে ফলনও। তাই আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার দ্বিগুণ ফসলের আশা করছেন চাষিরা। এ কারণে চলতি মৌসুমে সেচ-সুবিধায় বোরো ধান উৎপাদনে ১০৯ কোটি টাকার জ্বালানি ও সার ব্যবহার কমবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, চলতি বোরো মৌসুমে রংপুর, নীলফামারী ও দিনাজপুরের ১২টি উপজেলায় ৭০ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার হেক্টর বেশি। এতে অতিরিক্ত ৭০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
বিজ্ঞাপন
রংপুর জেলার মধ্যে রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলা রয়েছে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায়। এ ছাড়া নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর ও নীলফামারী সদর উপজেলা, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর ও খানসামা উপজেলা রয়েছে।
সেচ-সুবিধা পাওয়া রংপুর সদর উপজেলার খলেয়া গঞ্জিপুর এলাকার কৃষক জহুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে ৯ হাজার টাকায় এক একর জমি (১০০ শতাংশ) চাষাবাদ করতাম। এখন সেখানে প্রতি একরে খরচ পড়ছে মাত্র ৪৮০ টাকা। আমরা ভীষণ খুশি। এই সুবিধা ধরে রাখলে গ্রামের অসচ্ছল কৃষকরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন এবং চাষাবাদও বাড়বে।
বিজ্ঞাপন
একই গ্রামের মোবারক মিয়া বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ পরিস্থিতিতে আমরা তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় ক্যানেলের পানি দিয়ে বোরো ধান চাষ করছি। ডিজেল ও বিদ্যুচ্চালিত পাম্প দিয়ে জমি সেচ দিতে একরপ্রতি খরচ হয় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা। কিন্তু এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানিতে সেচ দিতে খরচ হচ্ছে ৪৮০ টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী মুহাম্মদ আমিরুল ইসলাম ভূঞা ঢাকা পোস্টকে জানান, এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ হাজার হেক্টর জমি। তবে সেচের আওতায় অতিরিক্ত আরও ১৭ হাজার হেক্টর জমি এসেছে। এতে কমপক্ষে ১৫ লাখ কৃষক এই সেচ-সুবিধা পাচ্ছেন। এ কারণে ধানের উৎপাদনও বাড়বে। কৃষকরাও লাভবান হবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে যেখানে ৯ হাজার টাকায় এক একর জমি চাষাবাদ করা হতো, এখন সেখানে প্রতি একরে খরচ পড়ছে মাত্র ৪৮০ টাকা। এতে সুবিধাভোগী কৃষকরা ভীষণ খুশি। তারা চাইছেন এই প্রকল্প যেন বন্ধ না হয়। তবে সেচ প্রকল্পের নামে অনেক সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে বাড়তি টাকা নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও কৃষকদের এই অভিযোগ মানতে নারাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম ঢাকা পোস্টকে জানান, তিস্তা সেচ প্রকল্প উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। বিশেষ করে এই প্রকল্প কৃষকদের কৃষিমুখী রাখার সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন ও জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে আসছে। এবার ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ক্যানেলের মাধ্যমে সেচ দেওয়ায় বোরো ধান উৎপাদনে ৯৫ কোটি টাকার জ্বালানি সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে ১৪ কোটি টাকার সার কম ব্যবহার হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, নতুন করে সেচের আওতায় আসা জমিতে নিরবচ্ছিন্ন সেচ দেওয়া হবে। কৃষকদের যাতে সেচ পেতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবার তাদের সেচ পেতে কোনো অসুবিধা হবে না। আশা করছি এবার সেচ-সুবিধার আওতায় কৃষকদের জ্বালানি ও সারে অন্তত ১০৯ কোটি টাকা কম খরচ পড়বে। পাশাপাশি প্রায় ২০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ