ঠাকুরগাঁওয়ে দবিরুল ইসলামের শততম জন্মবার্ষিকী পালন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি ভাষা সৈনিক দবিরুল ইসলামের শততম জন্মবার্ষিকী পালন করেছে ঠাকুরগাঁও জেলা ছাত্রলীগ। এ উপলক্ষে মাসব্যাপী নানান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার (১৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে একটি র্যালি শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। এরপর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দবিরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। পরে আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজাহার ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুল আলম বাবলু, বিশেষ অতিথি জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রিপন, জেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি মাহবুর হোসেন রনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার পারভেজ পুলকসহ আরও অনেকে। এছাড়াও জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজাহার ইসলাম বলেন, আমরা উনার স্মৃতিতে একটি স্মৃতিস্তভ স্থাপনের কাজ করছি। আমরা চাই ঠাকুরগাঁওয়ের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি উনার নামে নামকরণ করা হোক।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি ও ভাষা সৈনিক দবিরুল ইসলামের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা মাসব্যাপী নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। সেই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা র্যালি করেছি এবং তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। শেষে আমরা আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল করেছি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম সভাপতি ছিলেন ভাষা সৈনিক অ্যাডভোকেট দবিরুল ইসলাম। ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ১৯২২ সালের ১৩ মার্চ তৎকালীন ঠাকুরগাঁও মহকুমার ঐতিহ্যেবাহী বামুনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
কিংবদন্তি এই ছাত্রনেতা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতিই শুধু নন তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদেরও একজন।
১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ে ঢাকা এবং উত্তরাঞ্চলের সবকটি জেলায় ভাষা আন্দোলনসহ পাকিস্তান বিরোধী সবকয়টি আন্দোলনে তার সাহসী ভূমিকা ছিল। এর আগে মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রাবস্থায় তিনি উত্তরাঞ্চলে ভূমিহীন কৃষকদের আন্দোলনেও শক্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এছাড়া 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ কর্মচারীদের নায্য আন্দোলন, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন, যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন এসবের পেছনে অসামান্য অবদান রেখেছেন এই মেধাবী ও তেজোদীপ্ত ছাত্রনেতা দবিরুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, বদরুদ্দীন ওমর, ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন ও এম আর আখতার মুকুলের লেখা বিভিন্ন বইতে তার অবদান তুলে ধরা হয়েছে।
পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়ে আমৃত্যু জেল-জুলুম ও নির্যাতন ভোগকারী এই অসীম অকুতোভয় সাহসী মানুষটি মাত্র ৩৯ বছর বয়সেই ১৯৬১ সালে ইহলোক ত্যাগ করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে ঠাকুরগাঁও সফরে এলে তার প্রিয় বন্ধু ও সহচরকে স্মরণ রাখতে পাবলিক লাইব্রেরি চত্ত্বরে 'দবিরুল ইসলাম স্মৃতি ফলক, বানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন এসডিও এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে। যেটি আজো দবিরুল ইসলামের স্মৃতিকে বহন করে চলছে।
এম এ সামাদ/এমএএস