যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করতে এসেছিলেন সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস। সভা শুরু হয়েছে এমন সময় প্রসূতি ওয়ার্ডে দুই নারীর আর্তচিৎকার। এখনই সিজার না করালে বাঁচানো যাবে না তাদের। তবে হাসপাতালের একমাত্র গাইনি চিকিৎসক রয়েছেন ছুটিতে। এ অবস্থায় সিভিল সার্জন বক্তব্য রেখে সিজারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। শনিবার (১২ মার্চ) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

রোববার দুই প্রসূতির অপারেশন করার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ সময় অনেকেই সিভিল সার্জনকে দায়িত্ব পালনে কর্তব্যপরায়ণ কর্মকর্তা হিসেবে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

প্রসূতি সুমাইয়া খাতুন (১৯) ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বৈচিতলা গ্রামের জনৈক রিংকু এবং শাহানারা (৩০) যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের টিটো মিয়ার স্ত্রী। 

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার বলেন, আমাদের এখানে স্থায়ী কোনো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ডা. হাবিবুন নাহার ফোয়ারা একা সিজারিয়ান অপারেশন করে থাকেন। তবে শনিবার তিনি ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে ছিলেন। অথচ দুজন প্রসূতির সিজার করা খুবই জরুরি ছিল। ওই সময় সিজার না করলে তাদের বাঁচানো যেত না।

আবার ওই সময় হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস। এমন সময় হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ড থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে ইন্টারকমে নার্সরা জানায়, জরুরি সিজার করতে হবে দুজন প্রসূতিকে। পরে সিভিল সার্জনকে জানালে সঙ্গে সঙ্গে তিনি অপারেশন থিয়েটার রেডি করার নির্দেশ দেন। পরে সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মিলে দুই প্রসূতিকে সিজার করেন। সিজারে দুজন প্রসূতির দুটি ছেলে সন্তান হয়েছে।

প্রসূতি সুমাইয়া বলেন, আমি কিছু জানি না। অপারেশনের পরে আমার ননদের কাছে শুনি, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আর সিভিল সার্জন সিজার করেছে। সঠিক সময়ে সিজার না করলে আমাকে বাঁচানো যেত না। আল্লাহর পরই তো চিকিৎসকরা মানুষের জীবন বাঁচায়। আমি সেটা বুঝতে পেরেছি। বর্তমানে আমি আর আমার সন্তান ভালো আছি।

আরেক প্রসূতির স্বামী টিটু মিয়া বলেন, আমার স্ত্রী ও ছেলে ভালো রয়েছে। যশোরের মধ্যে চৌগাছায় সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হয়। কিন্তু সঠিক সময়ে গাইনি চিকিৎসক না থাকায় একটি দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েছিলাম। 

সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটা অনুষ্ঠানে ছিলাম। হঠাৎই ওই হাসপাতালে দুই প্রসূতিকে সিজারের দরকার হয়ে পড়ে। তবে দুঃভাগ্যক্রমে হাসপাতালে সিজারের জন্য চিকিৎসক ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে আমি সিজার করেছি। এর আগে প্রায় এক হাজারের বেশি সিজার করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। তবে এমন বিপদগ্রস্ত অবস্থায় কোনো প্রসূতিকে অপারেশন করেনি।

প্রসঙ্গত, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রসূতি সেবায় ২০০৪ সাল থেকে পরপর কয়েক বছর উপজেলা পর্যায়ে খুলনা বিভাগে সেরা হয়ে আসছে। এ কারণে যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরা জেলার ৮-১০ উপজেলার বাসিন্দারা প্রসূতি সেবা নিতে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। ফলে প্রতিদিন হাসপাতালটিতে গড়ে ৪-৬টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়ে থাকে।

তবে হাসপাতালটিতে স্থায়ী কোনো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। প্রেষণে একজন গাইনি কনসালট্যান্ট দিয়ে এখানকার প্রসূতি বিভাগের কার্যক্রম চালানো হয়। তবে ব্যক্তিগত কারণে শনিবার গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. হাবিবুন্নাহার ফুয়ারা ছুটিতে ছিলেন।

জাহিদ হাসান/এসপি