দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের ইছামতি নদীর সাঁকোর পাড়ের সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না করেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

জানা গেছে, ২০১৮ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহামুদ আলী উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের ইছামতী নদীর বটতলী সাঁকোর পাড়ের ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এর নির্মাণকাজও শুরু হয়। কিন্তু ঠিকাদার ব্রিজের পাইলিংয়ের কাজ করে নির্মাণকাজ শেষ না করেই বিল তুলে নিয়ে যান।

প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী, পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৬ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেতুর ২০১৮ সালের জুন মাস কাজ শুরু হয়ে এর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের জুন মাসে। কিন্তু এই গত পাঁচ বছর কেবল সেতুর পাইলিং ছাড়া আর কোনো কাজই করা হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুর কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫০ ভাগ টাকা তুলে নিয়েছে। সময়মতো সেতুর কাজ শেষ না হওয়াই সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে ইছামতী নদীর দুই পাড়ের মানুষ। যাতায়াতসহ অন্যান্য কাজে, বিশেষ করে বর্ষাকালে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ জনগণকে। অসুস্থ, গর্ভবতী ও স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অনেক দূর ঘুরে যাতায়াত করতে হয়।

খানসামা উপজেলা কৃষিনির্ভর হওয়ায় কৃষকদের তাদের কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে বাজারে যেতে হয়। এতে তাদের পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। সরকারের কাছে এলাকাবাসীর দাবি, সেতুর কাজটা দ্রুত শেষ করে এলাকার মানুষের মুখে হাসি ফুটুক।

স্থানীয় বাসিন্দা জুবায়ের হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত পাঁচ বছরে শুধু সেতুর পাইলিং করা ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি। এতে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নদীর দুই পাড়ে রয়েছে স্কুল, হাট-বাজার। বর্ষার সময় ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারে না শিশুরা। কৃষকরা তাদের কৃষিপণ্য বাজারে নিতে পারে না ঠিকমত। ১০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয় তাদের।

গোয়ালডি গ্রামের সুজন ইসলাম প্রশ্ন রেখে বলেন, একটা ব্রিজ হতে আর কত দিন লাগবে? কত দিন আমাদের কষ্ট করতে হবে? আমার নিজের চাচা সাঁকো থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন। অল্পের জন্য গলায় রড ঢোকেনি। কারও কোনা বড় ধরনের দুর্ঘটনা হলে এর দায় কে নেবে?

স্কুলছাত্রী টুম্পা বলে, আমি প্রতিদিন নদী পার হয়ে স্কুলে যাই। এখন কষ্ট করে হলেও যেতে পারছি। কিন্তু বর্ষার সময় যেতে পারি না। সাঁকোটিও ভাঙা। স্কুলে গেলে অনেক দূর দিয়ে ঘুরে যেতে হয়। আমি চাই ব্রিজটার কাজ দ্রুত শেষ করা হোক, তাহলে আমাদের স্কুলে যেতে আর কষ্ট হবে না।

গোয়ালডী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সফরি উদ্দিন বলেন, সেতুর কাজ শুরু করার পর শুধু পাইলিং করে গেছে ঠিকাদার। এর মধ্যে ঠিকাদার ৫০ ভাগ টাকা তুলে নিয়েছে কিন্তু সেতু আর হয়নি। এতে অনেক ভোগান্তিতে পড়েছে নদীর দুপারের মানুষ। সরকারের কাছে আবেদন, সেতুটা যেন তাড়াতাড়ি ঠিক করে দেওয়া হয়। দুপারের মানুষ খুব কষ্টে আছে।

দিনাজপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিডি) অধিদপ্তরের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল আজিজ জানান, বন্যার কারণে সেতুর কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদার। ইতোমধ্যে পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুত সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।

ঠিকারদার টাকা তুলে নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে বলেন, বাকি কাজ ঠিকাদারকে শেষ করার জন্য বলা হয়েছে।

ইমরান আলী সোহাগ/এনএ