টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি। জেলা শহরের মূল পর্যটনকেন্দ্র ও বিনোদনকেন্দ্রসহ পুরো রাঙ্গামাটি শহরজুড়ে পর্যটকদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। ইতোমধ্যেই বুকিং হয়ে গেছে শহরের ৭০-৮০ ভাগ হোটেল-মোটেল ও কটেজের রুম। ছুটি কাটিয়ে ফেরার জন্য বাসের টিকিটও অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।

সিম্বল অব রাঙ্গামাটি খ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ, পলওয়েল পার্ক, রাঙ্গামাটি পার্ক, শহীদ মিনার, ডিসি বাংলো, আরণ্যক হলিডে রিসোর্টসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র এখন লোকে লোকারণ্য। তিন দিনের ছুটি থাকায় পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি দেখা গেছে। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে পর্যটনকেন্দ্রগুলো।

বগুড়া থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. আখতারুজ্জামান জানান, দেশে করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করেছে। টানা তিন দিনের ছুটি উপভোগ করতেই রাঙ্গামাটি বেড়াতে আসা। তবে এত বেশি পর্যটকের আসবে সেটা ধারণা করতে পারিনি। কিছু অসুবিধা হলেও রাঙ্গামাটির সৌন্দর্যে সব ভুলে গেছি। 

সিলেট থেকে বেড়াতে এসেছেনে রনি ঘোষ। তিনি বলেন, এক পর্যটন নগরী থেকে আরেক পর্যটন নগরীতে আসা সত্যিই রোমাঞ্চকর। আমরা আমাদের গ্রামের একটি সংগঠন থেকে রাঙ্গামাটি ভ্রমণে এসেছি। আবাসিক হোটেলে জায়গা পেতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। আমরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে শহরের বিভিন্ন হোটেলে রুম বুকিং করেছি। পর্যটন নগরীতে হোটেলের এত অপ্রতুলতা সত্যিই হতাশার। রাঙ্গামাটি শহরকে আরও পর্যটনবান্ধব করতে আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের আহ্বান জানান তিনি।

পর্যটকদের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই হ্রদ। পাহাড়ে ঘেরা হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ছোট-বড় নৌকা ভাড়া করে ভ্রমণে বের হচ্ছেন পর্যটকরা। অনেকেরই কাপ্তাই হ্রদে রাত্রিযাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

রাঙ্গামাটি পর্যটন ঘাটের ইজারাদার মো. রমজান আলী জানান, করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য টানা তিন দিনের এই ছুটিকে সামনে রেখে আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। হ্রদ ভ্রমণসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে নৌপথে ভ্রমণের জন্য আমরা ছোট-বড় ট্যুরিস্ট বোটগুলো প্রস্তুত রেখেছিলাম। পর্যটকদের উপস্থিতি যথেষ্ট আশানুরূপ। আশা করছি শুক্রবার (১৮ মার্চ) থেকে পর্যটক আরও বাড়বে। 

পর্যটক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে শহরের মার্কেটগুলোতেও। পর্যটক আকর্ষণে স্থানীয়ভাবে তৈরি বিভিন্ন পাহাড়ি পোশাক, পণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়েছেন দোকানদাররা। 

বয়ন টেক্সটাইলের মালিক শেফালিকা চাকমা জানান, টানা তিন দিনের ছুটিরর বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা বিভিন্ন পোশাক, ব্যাগ, আচার ও হাতে তৈরি পণ্য তুলেছি দোকানে। এই ছুটিতে অনেক পর্যটক আসছেন। বিক্রিও মোটামুটি ভালো।

হোটেল নাদিশার ব্যবস্থাপক শাহিনুর খানা জানান, টানা তিন দিনের ছুটির কথা মাথায় রেখে আমরা আগে ভাগেই নিজেদের প্রস্তুতি সেরে রেখেছি। ইতোমধ্যেই আমাদের ৫০টি রুমের প্রায় শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। 

একই কথা বলেন হোটেল গ্রিন ক্যাসেল ও হোটেল সাংহাইয়ের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের দুইটা হোটেল মিলে মোট ৬৫টি রুম রয়েছে। যার ৮০ শতাংশই ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। রাঙ্গামাটির প্রায় হোটেল-মোটেলের রুমই শতভাগ বুকিংয়ের পথে।

রাঙ্গামাটি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন সেলিম বলেন, তিন দিনের টানা বন্ধের কারণে শহরের সিংহ ভাগ হোটেল রুমের বুকিং শতভাগ হওয়ার পথে। যারা অগ্রিম বুকিং না করে আগামীকাল শহরে প্রবেশ করবেন তাদের রুম পেতে কষ্ট হবে। রাঙ্গামাটি শহরে ৫৪টি হোটেল রয়েছে, যা ১০ হাজার পর্যটক ধারণে সক্ষম। কিন্তু ছুটির কারণে পর্যটক সমাগম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় অনেক পর্যটকই হয়তো রুম পাবেন না। 

রাঙ্গামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৃজন কান্তি বড়ুয়া বলেন, যথেষ্ট পর্যটক এসেছেন রাঙ্গামাটিতে, হয়তো আগামীকাল আরও আসবেন। পর্যটন কমপ্লেক্সের ৮৮টি রুমের মধ্যে ৬০-৭০ ভাগ রুমের বুকিং হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে রাঙ্গামাটি ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসান ইকবাল বলেন, আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছি। জেলা পুলিশের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে পর্যটকদের।

মিশু মল্লিক/আরএআর