মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে গাছের গুঁড়ি বহনকারী একটি ট্রাক পার হওয়ার সময় ভেঙে পানিতে পড়েছে বেইলি সেতু। শুক্রবার (১৮ মার্চ) রাত ১২টার দিকে উপজেলার গাঁও‌দিয়া ইউনিয়‌নের ঘোলতলী এলাকার মুন্সিগঞ্জ-টঙ্গিবাড়ী-মাওয়া সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পর থেকে মুন্সিগঞ্জ-টঙ্গিবাড়ী-মাওয়া সড়কের যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এ পথে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, রাতে তারা কেউ বাড়িতে, কেউ মসজিদে শবে বরাতের নামাজ পড়ছিলেন। সোয়া ১২টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। ঘোলতলী বাজারে কাছে গিয়ে দেখেন গাছের গুঁড়িবোঝাই বড় একটি ট্রাক সেতুসহ খালের পানিতে ভেঙে পড়েছে। ট্রাকটি গাছের গুঁড়ি নিয়ে বালিগাঁও থেকে মাওয়ার দিকে যাচ্ছিল। তাৎক্ষণিক গাড়ির চালক ও তার সহকারীকে উদ্ধার করা হয়। তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

শনিবার (১৯ মার্চ) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটি মধ্যখান থেকে ভেঙে পানিতে পড়ে আছে। ডুবে আছে গাছের গুঁড়িবাহী ট্রাকটি। সড়কের দুই পাশ থেকে আসা যাত্রী ও চালকরা সড়ক বিচ্ছিন্ন থাকায় আক্ষেপ নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী শাহিন খান বলেন, ট্রাকটি কাঠসহ পানির নিচে রয়েছে। সেতুটির মধ্যখানে ভেঙে পড়ায় এই পথে গাড়ি যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় সাইদুল ইসলাম বলেন, সেতুটি সরু ছিল। ছিল লক্কড়ঝক্কড় মার্কা। একটি গাড়ি গেলে আরেকটি গাড়িকে অপর প্রান্তে অপেক্ষা করতে হতো। সেতুতে গাড়ি উঠলেই সেতু কাঁপত। বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা ছিল এত দিন। শেষ পর্যন্ত সেতুটি ভেঙেই পড়ল।

মুন্সিগঞ্জ-টঙ্গিবাড়ী- মাওয়া পথের সিএনজি চালক জাকির হোসেন বলেন, আজ গাছের গুঁড়ি নিয়ে ঘোলতলীর সেতুটি ভেঙে পড়ল। এ সড়কটিতে মুন্সিগঞ্জ, টঙ্গিবাড়ী ও লৌহজং উপজেলার অংশে এমন আরও ৮ থেকে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু আছে। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক থেকে দ্রুত অপসারণ করা দরকার। নয়তো আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ-টঙ্গিবাড়ী-লৌহজং উপজেলার মানুষের জন্য প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থি সেতুটি। এ পথ দিয়ে বড় বড় মালবাহী যানবাহন চলাচল করে। প্রতিদিন জেলার এ তিনটি উপজেলার অর্ধলক্ষ মানুষ যাতায়াত করে এখান দিয়ে। এখানে বেইলি সেতু স্থাপন করা হলে আবারও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মানুষের ভোগান্তি ও দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত এখানে পাকা সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে জানান স্থানীয়রা।

শ্রীনগর ফায়ার স্টেশন কর্মকর্তা দেওয়ান আজাদ বলেন, বেইলি সেতু ভেঙে পড়ার খবর পেয়ে রাত দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে যাই। এ ঘটনায় নিহত হয়নি। দুজন আহত হয়েছে। মূলত জরাজীর্ণ সেতু ও অতিরিক্ত ওজনের কারণেই সেতুটি ভেঙে পড়েছে।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল আউয়াল শনিবার সকালে বলেন, ট্রাকটি বালিগাঁও থেকে লৌহজংয়ের দিকে যাচ্ছিল। অতিরিক্ত ওজনের কারণে সেতু ভেঙেছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ট্রাকের চালক ও সহকারী হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন। কংক্রিটের সেতুর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে।

মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিন রেজা বলেন, ট্রাক উদ্ধার ও বেইলি সেতু পুনর্নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট লোকজনকে খবর দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ চালু করার জন্য আবারও এখানে বেইলি সেতু স্থাপন করা হবে। তবে শিগগিরই বেইলি সেতু অপসারণ করে এখানে কংক্রিটের সেতু নির্মাণ করা হবে।

ব.ম শামীম/এনএ