রংপুরের পীরগাছায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ইমরোজ হোসেন রনি (২৮) নামে এক যুবকের আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনার অভিযোগে স্ত্রী, শ্বশুর, শ্যালিকা ও ভায়রাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

আত্মহত্যার ঘটনার এক মাস ৬ দিন পর শুক্রবার (১৮ মার্চ) রাতে ঢাকার সাভার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১৩ এর একটি দল। এর আগে, ওই ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা হলে অভিযুক্তরা আত্মগোপনে চলে যায়।

শনিবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন র‍্যাব-১৩ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাহমুদ বশির আহমেদ।

এদিকে পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগে প্রেমের বিয়ে হয় শামীমা ইয়াসমিন সাথীর। তাদের দুই বছরের একটি পুত্র সন্তান আছে। কিছুদিন আগে সাথী তার স্বামীর কাছে দেনমোহরের ৫ লাখ টাকা এবং তার বাবা-মায়ের ভরণপোষণ দাবি করে বসেন। এরপর থেকেই রনি চিন্তিত ও বিষন্ন ছিলেন। ঘটনার তিন দিন আগে ৯ ফেব্রুয়ারি রনিকে না জানিয়ে তার স্ত্রী সাথী পার্শ্ববর্তী রতনপুর গ্রামে চাচা মুকুল মিয়ার বাড়িতে চলে যান।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে রনি চাচা শ্বশুরের বাড়িতে সাথীকে আনতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। এরপর রাগ ক্ষোভ আর অভিমানে বিষণ্ন হয়ে রনি চাচা শ্বশুরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে অজ্ঞাত স্থান (প্রাথমিকভাবে) থেকে ফেসবুক লাইভ করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার আত্মহত্যার প্ররোচনার জন্য স্ত্রী, শ্বশুর, শ্যালিকা ও ভায়রাসহ পরিবারের লোকজনদের দায়ী করেন।

ফেসবুক লাইভে রনি বলেন, আমার স্ত্রী আমাকে না বলে তিন দিন আগে তার চাচা মুকুল মিয়ার বাড়িতে চলে যায়। আমি আনতে গেলে তারা আমার কাছে দেনমোহরের ৫ লাখ টাকা এবং তার বাবা-মায়ের ভরণপোষণ দেওয়ার দাবি করে। আমি এখন ফেসবুক লাইভে এসে বিষপানে আত্মহত্যা করব। আমার মৃত্যুর জন্য আমার স্ত্রী, শ্বশুর, চাচা শ্বশুর ও ভায়রা এমদাদুল হক দায়ী বলে একটি সাদা বোতলের মুখ খুলে বিষপান করেন রনি। এ সময় তার সাথে এক কিশোরকে দেখা যায়। কিন্তু তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।

বিষপানের ঘটনার খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন মুমূর্ষ অবস্থায় রনিকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রনি।

এ বিষয়ে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেষ চন্দ্র বলেন, আত্মহত্যায় প্ররোচনার জন্য শ্বশুর, চাচা শ্বশুর, স্ত্রী এবং ভায়রাকে দায়ী করেন ওই লাইভে এবং বিষপান করেন। মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে তিনি মারা যান। পরে রনির বাবা নিজে বাদী হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেন। ওই মামলায় র‍্যাব-১৩ সাভার থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করেছে। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই