শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গোর ধাক্কায় যাত্রীবোঝাই লঞ্চডুবির ঘটনায় নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে ভিড় করছে মানুষ। ঘাটে যখনই কোনো ট্রলার ভিড়ছে, স্বজনদের খোঁজে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ।

কেউ কেউ আবার স্বজনদের খোঁজে ট্রলার নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন লঞ্চডুবির ঘটনাস্থলে। সেখানে খুঁজে না পেয়ে আবার ফিরছেন লঞ্চঘাটে।

এদিকে অনেক স্বজন অভিযোগ করছেন, ডুবুরিরা লঞ্চ উদ্ধারে কাজ করলেও লঞ্চের ভেতর থেকে মরদেহ তুলে আনার কাজ ঠিকমতো করছেন না।

মুন্সীগঞ্জ সদরের উত্তর ইসলামপুরের রায়হান নামে এক তরুণ বলেন, আমার গ্রামের তিনজন মারা গেছেন। তাদের খোঁজে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। মরদেহ উদ্ধার হয়েছে কিন্তু এখনো আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, ‘লঞ্চ উদ্ধারে অনেক ডুবুরি কাজ করছেন। কিন্তু তারা ডুবে থাকা লঞ্চ থেকে মরদেহ ঠিকমতো উদ্ধার করছেন না। সবাই দেখেছে মানুষ ডুবে গেছে। কিন্তু এত দেরি করছে কেন?’ 

ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে জীবিত ফেরা একটি হাসপাতালের কর্মী মোকসেদা বেগম বলেন, ‘আমাদের লঞ্চটা সামনে ছিল। পেছনে বড় একটা জাহাজ ছিল। পেছন থেকে ওই জাহাজটা আমাগো লঞ্চরে ধাক্কা দিল। এভাবে ১০ মিনিট পর্যন্ত ধাক্কা দিতে দিতে সামনে লইয়া যাইতাছিল। এরপর পানি উইঠ্ঠা আমাদের লঞ্চটা চোখের সামনে ডুইব্বা গেল।’

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার গণকপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোকসেদা আরও বলেন, ‘ডুবন্ত লঞ্চ থেকে আমি লাফাইয়া পানিতে পড়লাম। পানিতে তলাইয়া যাইতাছিলাম। কোনো রকমে সাঁতরাইয়া পানির ওপর উঠি। এরপর একটা বস্তা ধইরা ভাইসা ছিলাম। চোখের সামনে ছোট বাচ্চা, মহিলা কত মানুষ তলাইয়া গেল--’  বলেই আহাজারি করতে থাকেন মোকসেদা।

আরেক যাত্রী সজীব মাহমুদ বলেন, ‘আমি তেজগাঁও টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অষ্টম সেমিস্টারের ছাত্র। সামনেই আমার ফাইনাল পরীক্ষা। এ জন্য ঢাকায় গিয়েছিলাম প্রবেশপত্র আনতে। দুপুর ১টা ৫৮ মিনিটের দিকে আমাদের লঞ্চ নারায়ণগঞ্জ থেকে ছাড়ে। লঞ্চের ওপরে-নিচে ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো যাত্রী ছিল। রোদের কারণে সব যাত্রী কেবিনে ও নিচতলায় অবস্থান নিয়েছিল। আমি লঞ্চের বাইরের অংশে ছিলাম। লঞ্চটি কয়লা ঘাট এলাকায় আসার পর পেছন থেকে কার্গো জাহাজটি ধাক্কা দিতে থাকে। তখনই প্রবেশপত্র, বই-খাতাসহ পানিতে ঝাঁপ দিই। আমার সাথে আরও কয়েকজন ঝাঁপ দেয়। পরে তারা নদীতে নোঙর করে থাকা বাল্কহেডে ওঠে।’

তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘কার্গো জাহাজ লঞ্চকে ধাক্কা দিতে দিতে কাত করে ফেলে। একপর্যায়ে লঞ্চটি কাত হয়ে চোখের সামনে ডুবে যায়। ভাগ্যগুণে বেঁচে ফিরলাম। আমার সাথে লঞ্চে ওঠা কত মানুষ ছিল, তারা মরে গেল..।’

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হাসিব সরকার বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চে যাত্রীরা অধিকাংশই মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা বলে শুনেছি। ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছি।

জরুরি কেউ আহত থাকলে তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ফায়ার সার্ভিসের একটি দল মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে রাখা হয়েছে। নৌ পুলিশও তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানান তিনি।

ব.ম‌ শামীম/এনএ/জেএস