ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী মাহবুব আলমের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের বাবা আব্দুল হান্নান মিঠু বাদী হয়ে শনিবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার পোড়াদহ রেলওয়ে থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সকালে কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ সেতুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহবুব আলমের মরদেহ উদ্ধার করে পোড়াদহ রেলওয়ে থানা পুলিশ। ওইদিন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মাহবুব আলমের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

শুক্রবার বেলা ১১টায় গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার সাখিদার পাড়া মহল্লায় মাহবুব আলমের জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ঢাবি শিক্ষার্থী মাহবুব আলম দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলে প্রচার করা হয়। তবে মাহবুব আলমের আত্বীয়-স্বজন ও সহপাঠীরা কেউই তা বিশ্বাস করতে পারেননি। তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা দাবি করেন। সহপাঠী-পরিবারের সদস্যসহ অনেকের কাছে তার মৃত্যু রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে। মরদেহ দাফনের পর মাহবুব আলমের বাবা আব্দুল হান্নান শনিবার কুষ্টিয়ার পোড়াদহ রেলওয়ে থানায় গিয়ে হত্যা মামলাটি করেন।

মাহবুবের সহপাঠীরা জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেনের ছাদের ওপর থাকা অবস্থায় মাহবুব তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের স্টোরিতে সর্বশেষ একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। সেই পোস্টে রাতের ছবিতে মাহবুব ট্রেনের ছাদের ওপরে বসেছিলেন এবং একটি ছবিতে মাহবুবসহ দুইজন রয়েছেন। ওই পোস্টে লেখা ছিল- ‘অফ টু কুষ্টিয়া। কঠিন তবুও আনন্দঘন, মাঝপথে জুটেছিল, অপরিচিত সঙ্গী।’ ট্রেনের ছাদে মাহবুব আলমের পেছনে অপরিচিত ওই ব্যক্তিকে ঘটনার পর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাহবুবের কাছে টাকা কম থাকলেও তার কাছে দুটি দামি মোবাইল ছিল। সেই দুটি মোবাইল অক্ষত ছিল।

নিহতের বাবা আব্দুল হান্নান মিঠু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলে দুর্ঘটনায় মারা যায়নি। তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য মরদেহ রেললাইনে ফেলে রাখা হয়। তার মাথার পেছনে চাইনিজ কুড়ালের মতো কিছু ঢুকে গেছে মনে হচ্ছে। অনেকটা ক্ষত ছিল। এ ঘটনায় শনিবার পোড়াদহ রেলওয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছি।

কুষ্টিয়ার পোড়াদহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজের আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিহত শিক্ষার্থীর বাবা আব্দুল হান্নান মিঠু বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। শিক্ষার্থীর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, নিহত মাহবুব আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ১০০৬ নম্বর কক্ষে থাকতেন। মা-বাবার একমাত্র ছেলে সন্তান ছিল মাহবুব। তার ছোট আরেকটি বোন রয়েছে। তার বাবা আব্দুল হান্নান মিঠু জয়পুরহাট জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান।

চম্পক কুমার/আরআই