চাচা শ্বশুরকে ডাক্তার দেখাতে নারায়ণগঞ্জের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গিয়েছিলেন আরিফা বেগম (৩৫)। চিকিৎসা শেষে এম এল আফসার উদ্দিন নামে লঞ্চে করে মুন্সিগঞ্জে ফিরছিলেন। তবে তাদের বাড়ি ফেরা হলো না। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় শ্বশুর সাঁতরে তীরে উঠলেও মারা যান পুত্রবধূ ও নাতি।  

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে রূপসী-৯ নামে পণ্যবাহী কার্গোর ধাক্কায় রোববার (২০ মার্চ) দুপুরে ডুবে যায় এম এল আফসার উদ্দিন নামে একটি লঞ্চ। লঞ্চটি শতাাধিক যাত্রী নিয়ে নারায়ণঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জে যাচ্ছিল। 

আরিফা সদর উপজেলার রমজান বেগ এলাকার দ্বীন ইসলামের স্ত্রী। তার সঙ্গে ১৫ মাস বয়সী শিশুসন্তান সাফায়েত হোসেনও ছিল।

আরিফার ননদ লিপি বেগম বলেন, আমার চাচা আব্দুর রব ব্যাপারি অসুস্থ ছিলেন। চাচাকে ডাক্তার দেখিয়ে ভাবি ও ভাতিজা লঞ্চে করে ফিরছিল। দুপুরে এমনটাই আমাদের ফোনে জানান চাচা। দুপুর আড়াইটার দিকে চাচা বললেন, তাদের লঞ্চ ডুবে গেছে। ফরিদা ও সাফায়েতকে পাওয়া যাচ্ছে না। খবর পেয়ে আমরা নারায়ণগঞ্জের দিকে ছুটি। বিকেল ৪টার দিকে ফরিদা ও সাফায়েতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত আরিফার ছেলে মাহিম বলে, সকালে দাদাকে ডাক্তার দেখাতে বাড়ি হতে বের হয় মা। যাওয়ার আগে বলেছিল, সারাদিন যেন বাড়িতেই থাকি। দুষ্টামি না করি। মার কথা মেনে সারা দিন বাড়িতে ছিলাম। মা বলেছিল তাড়াতাড়ি চলে আসবে। ছোট ভাইকে নিয়ে গেল। আমার মা তো এল না। আমার মা-ভাই মইরা গেছে।

আরিফার স্বামী দিন ইসলাম বেপারি বলেন, দুইটা ছেলে নিয়ে আমাদের সুখের সংসার ছিল। আমার সব শেষ হয়ে গেল। আল্লা আমার সব কাইড়া নিয়া গেল।

এ ঘটনায় সদর উপজেলার উত্তর ইসলামপুর এলাকার মো. জয়নাল ভূইয়া (৬০) নামে আরেকজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জয়নাল ভূইয়া ওই এলাকার জুলফু আলী ভূইয়ার ছেলে। তিনি ড্রেজারের ব্যবসা করতেন।

নিহতের স্বজন ও ব্যবসায়িক পাটনার সৈয়দ মাদবর বলেন, ব্যবসায়িক কাজে রোববার সকালে জয়নাল ডেমরা যান। তিনি ব্যবসার কাজ শেষে দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চে করে ফিরছিলেন। লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পরে তিনি সাঁতরে তীরে উঠেছিলেন। তার কিছুক্ষণ পরেই তিনি মারা যান। মরদেহ এখনো নারায়ণগঞ্জে আছে। আনার প্রক্রিয়া চলছে।

এর আগে রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে বন্দর থানার আল আমিন নগর ও সৈয়দপুরের মাঝামাঝি কয়লাঘাট এলাকায় নির্মিতব্য নাসিম ওসমান ব্রিজের কাছে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়।

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিব সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ছিলাম। এ পর্যন্ত যে ছয়টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তার মধ্যে মুন্সিগঞ্জের তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এখনো মুন্সিগঞ্জের কয়জন নিখোঁজ রয়েছে সেই তালিকা আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি।

ব.ম শামীম/এসপি