আমি আদালত ও বিচারকের কাছে কৃতজ্ঞ
শ্বশুরবাড়িতে দাওয়াত রক্ষা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে শুরু হয় ঝগড়া। এ নিয়ে তার স্ত্রী করেন মামলা। মামলার পর স্বামী হাজতবাস করেন ১৫ দিন। পরে আদালত উদ্যোগ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব নিরসন করে দেন। সব অভিমান ভুলে নতুন করে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন দুজন।
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় সলুকাবাদ ইউনিয়নের গড়েরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল বারি ও তার স্ত্রী নাসিমা আক্তারের দ্বন্দ্ব নিরসন করে নতুনভাবে বাঁচার এবং জীবন উপভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছেন জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন।
বিজ্ঞাপন
কেবল আব্দুল বারি ও নাসিমা দম্পতির মামলা নয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা এমন ৫০টি মামলার একসঙ্গে রায় দিয়েছেন বিচারক জাকির হোসেন। কোনো আসামিকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংসারজীবন চালিয়ে যাওয়ার শর্তে বাদীদের সঙ্গে আপস করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
গত ১৫ মার্চ (মঙ্গলবার) দুপুরে সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন। এ সময় সব মামলার বাদী-বিবাদী, তাদের আইনজীবী ও পরিবারের লোকজনসহ সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর আদালতের পক্ষ থেকে ৫০ দম্পতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
আব্দুল বারি ঢাকা পোস্টকে জানান, চাচাশ্বশুরের ছেলেদের একটি অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়েছিল। পরে শ্বশুরও রাস্তায় পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন দাওয়াতে যাব কি না। সেখান থেকেই শুরু হয় ভুল-বোঝাবুঝি। আমার স্ত্রীর সঙ্গে হয় ঝগড়া। এ নিয়ে আমার স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়েছি অনেকবার। হাজতবাসও করেছি। আজ আদালত নিজ উদ্যোগে আমাদের সংসারজীবন চালিয়ে নেওয়ার শর্তে আপস করে দিয়েছেন।
আব্দুল বারির স্ত্রী নাসিমা আক্তার বলেন, আমাদের দুই বছর বয়সী সন্তান রয়েছে। আমরা তাকে লেখাপড়া করাতে চাই। আদালত আমাদের সুযোগ দিয়েছেন। এ জন্য আমি আদালত ও বিচারকের কাছে কৃতজ্ঞ।
একই গ্রামের বাসিন্দা প্রতিবেশী ইউনূস আলী বলেন, বিয়ে-শাদি করলে একবার বউয়ে রাগ করবে, আরেকবার স্বামী রাগ করবে। এই ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করা ভালো নয়। এ জন্য দুজনকেই আন্তরিক থাকতে হবে। আমরা চাই তারা যেন একসঙ্গে চলতে পারে।
সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) অ্যাডভোকেট হাসান মাহবুব সাদী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালত পৃথক ৫০টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলায় একসঙ্গে যুগান্তকারী একটি রায় দিয়েছেন। আদালতে যে শুধু শাস্তি হয় তা নয়, পরিবারে শান্তিও ফেরানো হয় আদালতের মাধ্যমে।
সুনামগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল তুহিন ঢাকা পোস্টকে বললেন, বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির চিন্তা ও আইনের আওতায় থেকে যে কয়টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন, সেগুলো শুভ উদ্যোগ। বিচারপ্রার্থী জনগণের কষ্ট লাঘবের উপায় তৈরি করেছেন তিনি।
সুনামগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট রোকেস লেইস ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিচারক মো. জাকির হোসেন তার দায়িত্ব পালনের সময়ে শিশু ও নারীদের মামলাগুলোর ভালো সমাধান দিয়েছেন। এগুলো আপস করে দেওয়ার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। তার দায়িত্ব পালনের সময়ে বেশ কিছু মামলা এভাবে আপস হয়েছে। এটাকে সাধুবাদ জানাই আমরা।
এনএ