স্ত্রী সালমা ওসমান লিপির সঙ্গে শামীম ওসমান

চিকিৎসার জন্য গত ২৮ মার্চ থেকে সপরিবারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে আছেন আলোচিত সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। বছরে অন্তত একবার হলেও রুটিন চেকআপের জন্য কলকাতা যান এই রাজনীতিক। কিন্তু এবারের যাওয়াটা যেন একদমই অন্যরকম ছিল তার জন্য। দেশের আনাচে কানাচে শামীম ওসমানকে চেনেন না বা তার নাম জানেন না এমন রাজনীতি সচেতন মানুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে। 

বিশেষ করে তাকে কাছে পেলে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা সেলফি তোলার শখও পূরণ করেন। কিন্তু দেশের বাইরে কলকাতা শহরে সেই শামীম ওসমানকে দেখে তাকে চিনতে পারা এবং সেখানকার তরুণ-তরুণীদের সেলফি তোলার জন্য ভিড় জমানোর মতো ঘটনা অনেকটাই বিস্ময়কর। 

দেশের আলোচিত রাজনীতিক শামীম ওসমানের এই সেলিব্রেটি হয়ে ওঠার পেছেনের গল্পটি হলো একটি মাত্র স্লোগান ‘খেলা হবে’। যে স্লোগান পাল্টে দিয়েছিল পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী হালচাল। কলকাতা শহরে যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই তাকে চিনতে পেরে তরুণ-তরুণীরা ছুটে আসছেন সেলফি তুলতে। বাদ যায়নি সেখানকার গণমাধ্যমের চোখও। ইতোমধ্যেই টাইমস অব ইন্ডিয়া Original ‘Khela Hobe’ man returns to Kolkata roots for ‘a breath of oxygen’ শিরোনামে শামীম ওসমানকে নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে।  

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতা শহরের নিউ মার্কেট এলাকার আশপাশে কিংবা হোটেলের লবি, যেখানেই শামীম ওসমান যাচ্ছেন সেখানেই তার ভক্তরা তাকে চিনে ফেলছেন। ঢাকায় এমন ঘটনা স্বাভাবিক হলেও কলকাতা শহরের জন্য এমন দৃশ্য সত্যিই বিস্ময়কর। কলকাতার তরুণ-তরুণীরা ‘খেলা হবে’ স্লোগানের জন্য শামীম ওসমানকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন আর তুলছেন সেলফি।  কলকাতা শহরে শামীম ওসমান , তার স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি, ছেলে অয়ন ও মেয়ে অঙ্গনা যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই এই দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছে। 

টাইমস অব ইন্ডিয়ার কাছে শামীম ওসমান তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন,  এই শহরের উষ্ণতা তার জন্য অনেকটাই বিশুদ্ধ অক্সিজেনের মতো।  শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি যখন কলকাতায় থাকি, যেখানেই যাই, কেউ না কেউ বাংলাদেশে তাদের শেকড় সম্পর্কে নস্টালজিকভাবে কথা বলে। আমি অনুভব করতে পারি যে তারা তাদের শেকড় দেখতে কতটা আগ্রহী। আমি ভারত সম্পর্কেও একই রকম অনুভব করি’। 

শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘এমন দিন হয়তো আসবে যখন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য ভিসার প্রয়োজন হবে না। এখন সময় এসেছে সেই সেতু বন্ধনের, যেমনটি হতে পারে সেনজেন ভিসার মতোই। 

ওই প্রতিবেদনে শামীম ওসমান তার সেই শেকড়ের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, তার মা প্রয়াত ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহা ছিলেন পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমানের বাসিন্দা। তার মামা ছিলেন পশ্চিম বঙ্গের প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম। তার অন্যান্য আত্মীয়দের মধ্যে ছিলেন মনসুর হাবিবুল্লাহ, যিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার ছিলেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী মাহমুদ এ জাইদি। 

তিনি বলেন, প্রখ্যাত রাজনীতিক আবু বারকাত আতাউর গণি খান চৌধুরীও আমার মায়ের আত্মীয় ছিলেন। তবে আমার বাবা-মা বা আমি এবং আমার ভাই কেউই চাইনি যে আমরা রাজনীতিতে যোগ দিই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর (শেখ মুজিবুর রহমান) হত্যাকাণ্ড আমাদের জীবনকে চিরতরে বদলে দিয়েছে। 

এদিকে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) রাতে শামীম ওসমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শুক্রবার (০১ এপ্রিল) তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। 

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, কলকাতা শহরে আমার স্লোগান ‘খেলা হবে’ আমাকে জনপ্রিয় করেছে সেটি এতদিন শুনেছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। কিন্তু সশরীরে দেখার এমন অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। এখানকার তরুণ-তরুণীরা আমাদের দেশের তরুণ সমাজের মতই যথেষ্ট রাজনীতি সচেতন। তারা আমাকে দেখে চিনতে পারছে, আমাকে ঘিরে রীতিমত সেলফি উৎসবে মেতে উঠছে, অনেকে অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশে তাদের উত্তরসূরীদের বিষয়ে আলাপ করছে, সব মিলিয়ে আমি অভিভূত। একই সঙ্গে আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া, তিনি আমার মতো একজন নগণ্য মানুষকে এই বিদেশের মাটিতেও এতটা জনপ্রিয়তা আর সম্মান দিয়েছেন।  

রাজু আহমেদ/আরএআর