৮২ বছরের নিঃসঙ্গ বৃদ্ধা মহিতন বিবিকে ভোলেননি রংপুরের সাবেক পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার। গত বছর রংপুরে কর্মস্থলে থাকা অবস্থায় বৃদ্ধা মহিতনের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন তিনি। 

মহিতনের স্বামী জাফর আলী মারা গেছেন অনেক আগে। অন্যের জায়গায় একটা ছাপড়া ঘর করে থাকতেন তিনি। বৃষ্টি এলেই ভাঙা ঘরের চালা দিয়ে পানি পড়তো। আশপাশ থেকে খাবার খুঁজে খেতেন, না পেলে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতেন। তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দুই ছেলে কুমিল্লা থেকে কাজ করে ফেরার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। ছোট ছেলে ও মেয়ে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন।

দুঃখ-কষ্ট আর বিড়ম্বনায় দিন কাটানো মহিতনের গল্প গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তা নজরে আসে তৎকালীন পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকারের। পরে স্থানীয় সাংবাদিক, পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় মহিতনের ঠাঁই হয় মেয়ের বাড়িতে। সেখানে সকলের সহযোগিতায় একটি টিনের ঘর করে মেয়ের সঙ্গে থাকেন। কিন্তু ঘর পেলেও খাবার ঠিকমতো জোটে না তার। অভাব তার নিত্যদিনের সঙ্গী। 

গত বছরের নভেম্বরে রংপুর থেকে বদলি হন বিপ্লব কুমার সরকার। বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপকমিশনার (ডিসি) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি। রংপুর থেকে বদলি হওয়ার পাঁচ মাস হয়ে গেলেও অসহায় মহিতন বিবির কথা ভোলেননি বিপ্লব কুমার সরকার। 

পবিত্র মাহে রমজান আসন্ন। এ কারণে শুক্রবার (০১ এপ্রিল) গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের কৈপাড়া গ্রামের ওই বৃদ্ধার বাড়িতে চাল, ডাল, তেল, ডিম, দুধ, মসলা, খেজুরসহ এক মাসের বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার পৌঁছে দিয়েছেন বিপ্লব কুমার সরকার। এই উপহার পেয়ে আবেগ আপ্লুত বৃদ্ধা মহিতন। 

অশ্রুসিক্ত মহিতন বিবি বলেন, ‘বাবা কতদিন বাচিম জানং (জানি) না, কিন্তু মরার আগ পর্যন্ত বিপ্লব স্যারের দানের কথা ভুলিম না। আল্লাহ ওমাক (ওনাকে) ভালো থুক (রাখুক)। ’

রংপুরের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বিপ্লব কুমার সরকারের এই মানবিকতায় খুশি স্থানীয় সাংবাদিক মিজানুর রহমান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসপি থাকাকালীন তিনি যেভাবে মানবিক কাজ করে গেছেন, তা কখনো ভুলে যাওয়ার মতো নয়। তিনি এখন রংপুরে নেই, তার পরও বৃদ্ধা মহিতনের কথা মনে রেখেছেন। এসপি বিপ্লব কুমার সরকারের মতো সবাই যদি অসহায়দের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে সমাজে কোনো মানুষ না খেয়ে থাকতো না। 

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, পুলিশ সুপার হিসেবে মাত্র ২ বছর ৪ মাস রংপুরে ছিলেন বিপ্লব কুমার সরকার। এই অল্প সময়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি করে গেছেন মানবিক কাজ। ভালো কাজের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন মানুষকে। সবার মনে নাড়া দেওয়া এ মানুষটি দ্রুত বিস্তার করেছেন মানুষের মনে। সবার সঙ্গে গড়ে উঠেছে বন্ধুত্ব। আজকে যখন শুনলাম রমজান উপলক্ষে মহিতন বিবির জন্য তিনি এক মাসের বাজার করে পৌঁছে দিয়েছেন, তখন আমি অভিভূত। 

উল্লেখ্য, গত বছরের ১২ মে মহিতনের দুঃখ দুর্দশার কথা জানতে পেরে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন বিপ্লব কুমার সরকার। পরে এক মাসের বাজার হিসেবে চাল, ডাল, লবণ, তেল, পেঁয়াজ, আলু, মুরগিসহ বিভিন্ন খাবার পৌঁছে দেন। এছাড়াও ঈদ উপলক্ষে সেমাই, চিনি, দুধ, মশলা, নতুন কাপড় ও নগদ সাহায্য পৌঁছে দেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর