স্বামী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। স্বামীর জায়গা-জমি না থাকায় একমাত্র মেয়েকে নিয়ে থাকতেন ভাইয়ের বাড়িতে। সেখানে থেকেই মেয়েকে বিয়ে দেন। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে ওই ভাই তার বসতভিটাটুকু বিক্রি করে বছরখানেক আগে অন্যত্র চলে যান। ছাড়তে হয় একমাত্র অবলম্বনটুকু।

গত সাত-আট মাস ধরে নেত্রকোনার মদন উপজেলার চানগাঁও ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের সামনের পাকা রাস্তার পাশে একটি গাছের নিচে বসবাস করে আসছেন অসহায় বেগম আক্তার (৪৮)। তিনি শাহপুর গ্রামের মৃত উছেন আলীর মেয়ে।

বর্তমানে ওই গাছটির নিচেই রোদ, বৃষ্টি, ঝড় উপেক্ষা করে দিনরাত পার করছেন বেগম আক্তার। এখানেই চলে তার রান্নাবান্না থেকে শুরু করে থাকা-খাওয়া, ঘুমানো এবং পয়োনিষ্কাশনের কাজও।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দীর্ঘদিন আগে একই উপজেলার মাঘান গ্রামের ছাবেদ আলীর সঙ্গে বিয়ে হয় বেগম আক্তারের। ১০ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। দাম্পত্য জীবনে এক মেয়ে রয়েছে তার। স্বামীর কোনো জায়গা-জমি না থাকায় একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বেগম শাহপুর গ্রামের বাবার বাড়িতে চলে যান। সেখানে দীর্ঘদিন বসবাস করেন তার ভাই রইছ উদ্দিনের বাড়িতে।

তারা জানান, দুই বছর আগে মেয়েকে বিয়ে দেন তিনি। এর মধ্যে দারিদ্র্যের কারণে এক বছর রইছ উদ্দিন বসতভিটা বিক্রি করে পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে যান। তখন থেকেই এলাকার বিভিন্ন স্থানে খোলা আকাশের নিচে জীবন কাটছে বেগম আক্তারের। সর্বশেষ সাত-আট মাস ধরে শাহপুর গ্রামের একটি পাকা রাস্তার পাশে একটি গাছের নিচে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন বেগম। খোলা জায়গায় বসবাস করতে গিয়ে কয়েকবার অসুস্থ হয়েছেন বেগম আক্তার।

কিছুদিন আগে অসহায় বেগম আক্তরের এমন মানবেতর জীবনযাপনের দৃশ্য স্থানীয় ব্যক্তিরা ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। এতে বিষয়টি প্রশাসনের নজর পড়ে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ অসহায় বেগম আক্তারের পাশে ছুটে যান। স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে তার চিকিৎসাও করান প্রশাসন এবং তাকে পুনর্বাসনের জন্য জায়গাসহ সরকারি ঘর বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু সরকারি ঘরে যেতে নারাজ বেগম আক্তার।

কথা হলে বেগম আক্তার অনেকটা অভিমানের সুরে বলেন, আমার কেউ নাই। একটি মেয়ে ছিল তাকে বিয়ে দিয়েছি। তারপর থেকে সে আমার কোনো খোঁজখবর নেয় না। কাউকে আমি বিরক্ত করতে চাই না। তাই কষ্ট হলেও নিজের ইচ্ছায় স্বাধীনভাবে রাস্তার পাশের গাছের তলেই বাস করব।

স্থানীয় শাহপুর গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন, বেগম আক্তার খুব অসহায় একজন নারী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার পাশে বসবাস করছেন। আমরা এলাকার লোকজন ও স্থানীয় প্রশাসন বারবার তার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখান থেকে অন্য কোথাও যেতে রাজি হন না তিনি। শীতকালটা ওই জায়গায় কাটিয়েছেন। কিন্তু এখন ঝড়-বৃষ্টির সময় আসছে। এ অবস্থায় একজন নারী হয়ে এখানে বাস করাটা তার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ বলেন, বেগম আক্তার দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার পাশে বসবাস করছেন। আমি খবর পেয়ে কয়েক দিন তাকে দেখতে গিয়েছি। তার বসবাসের জন্য জায়গাসহ ঘরও দিতে চেয়েছি কিন্তু তিনি তা নেবেন না বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েকবার অসুস্থ হওয়ায় আমি নিজে এনে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করিয়েছি। পরে সুস্থ হয়ে আবার তিনি একই জায়গায় গিয়ে গাছের নিচে বসবাস করছেন। তবু তার পুনর্বাসনের জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এনএ