ইসলামের দৃষ্টিতে পবিত্র জুমার দিনের গুরুত্ব অপরিসীম। এমনিতেই শুক্রবার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে। জুমার দিনের সওয়াব ও মর্যাদা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতোই। এ দিন ইসলামি ইতিহাসে বড় ও মহৎ কিছু ঘটনা ঘটেছে।

রাসুল (সা.) একটি হাদিসে বলেছেন, মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ১০৯৮)।

সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার শিশুদের মাঝে দেখা যায় আলাদা এক অনুভূতি। জুমার নামাজ শেষে তারা শিন্নি পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। নামাজ শেষে হাতে শিন্নি পাওয়াটাই যেন তাদের ঈদের আনন্দের মতো। গ্রামের মসজিদগুলোয় এই চিত্র আগে অহরহ দেখা গেলেও এখনো অনেক জায়গায় দেখা মেলে।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নে উদয়পুর জামে মসজিদ অবস্থিত। মসজিদের প্রবেশের রাস্তায় রয়েছে খেলার জায়গা। এখানে এসে শিশুরা খেলা করে। অপেক্ষা করে কখন কেউ কোনো তবারক বা শিন্নি আনে কি না।

শুক্রবার (১ এপ্রিল) বশির উদ্দিনের ছেলে লাবিব হাসান দলবেঁধে আসে সেখানে। পাঁচ বছর বয়সী লাবিব সমবয়সী ছেলে-মেয়েদের নেতৃত্ব দেয়। তার কথামতো বিভিন্ন মসজিদে যায় সবাই। তার নেতৃত্বে সবাই খেলাধুলা করছে। পাশাপাশি তাদের সবার লক্ষ, কেউ মসজিদে শিন্নি নিয়ে আসে কি না।

শুক্রবারের পর থেকে এক মাস শিন্নি পাবে না বলে সবাইকে জানান দেয়ে লাবিব। কারণ রমজান মাস শুরু হলে তা বন্ধ থাকবে। কিছুক্ষণ পরই দেখা যায় মসজিদে শিন্নি নিয়ে গেল এক মুসল্লি। দেখামাত্রই আনন্দের হাসি ফোটে লাবিবসহ সবার চোখেমুখে। দ্রুত খেলা শেষ করে দরজায় অপেক্ষা শুধু হয় তাদের।

কারও হাতে থালা, কারও হাতে গ্লাস, কেউ নিয়ে এসেছে বাটি। সবাই অপেক্ষা করছে কখন দেবে শিন্নি। তাই নামাজ শেষ না হতেই মসজিদের গেটের সামনে অপেক্ষা করছে তারা। খাবার পেলেই চলে যাবে নিজ নিজ বাড়িতে। দরিদ্র পরিবারের শিশুদের তো আগ্রহ থাকে বাড়িতে গিয়ে সবাইকে নিয়ে খাবে।

স্থানীয় শিক্ষক আবু জাফর বলেন, এরা যেভাবে মসজিদের তবারক নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকে, আমিও একসময় থেকেছি। শৈশবের সেই দিনগুলো অনেক ভালো ছিল। সেগুলো এদের দেখলে আজ খুব অনুভব করি। আমাদের সময়ও আমরা দলবদ্ধ হয়ে শিন্নি নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি করতাম। দুপুরে বাসায় ভালো খাবার থাকলেও মসজিদের শিন্নি ছিল অন্য রকম এক খাবার। আবার অভাবের কারণেও অনেক শিশু আসে একটু খাওয়ার জন্য।

অপেক্ষায় থাকা লাবিব বলে, প্রতি জুমার দিনে আমরা সবাই শিন্নি নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করি। মসজিদের শিন্নি অনেক মজা লাগে। আমরা সবাই মজা করে খাই। আগামী জুমার দিন আর পাব না। কারণ সামনের শুক্রবারে রোজা। তাই কেউ আর শিন্নি আনব না।

শর্মি বলে, ছোট ভাইটা শিন্নির জন্য কান্নাকাটি করে প্রতি শুক্রবার। তাই তাকেও নিয়ে আসছি। সেও যেন শিন্নি পায়। এই শিন্নি যদি প্রতিদিন দিত, তাহলে আরও ভালো হতো। আমরা পেট ভরে খেতে পারতাম।

মসজিদের মুসল্লি আব্বাস আলী বলেন, বাচ্চাদের এমন অপেক্ষা আসলে একটি তৃপ্তির বিষয়। আমরাও ছোটবেলা মসজিদের শিন্নি নিতাম। এভাবে শিন্নি খাওয়াতে বাচ্চারা আলাদা আনন্দ অনুভব করে।

মসজিদের ইমাম মাওলানা শোয়েব আহমেদ বলেন, আমাদের মসজিদে প্রায় শুক্রবার মিলাদ হয়ে থাকে। আর মিলাদের সময় বাচ্চারা তবারক নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। আলাদা জায়গার ভালো খাবারের চেয়ে এই তবারকে আলাদা একরকম তৃপ্তি পায় তারা। আসলে মসজিদের এই তবারক অনেক সুমিষ্ট হয়।

এনএ