বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী গ্রাম জিলবুনিয়া। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বংশ পরম্পরায় মাছ ধরার পেশায় জড়িত। আর দশজনের মতো জীবিকার তাগিদে এই গ্রামের মামুন, মানিক ও লোকমান নামে তিন বন্ধুও বলেশ্বর নদীতে মাছ ধরতেন। 

কিন্তু নদীতে তেমন মাছ না পাওয়ায় বিকল্প চিন্তা করে তরমুজ চাষ শুরু করেন তারা। তরমুজ চাষ করে প্রথমবারেই চমক দেখিয়েছেন তিন বন্ধু। তিন বিঘা জমিতে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিনিয়োগে প্রায় ৫ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তারা।  

সরেজমিনে জিলবুনিয়া গ্রামে দেখা যায়, বলেশ্বর নদীর বেড়িবাঁধের পাশের তিন বিঘা জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে তরমুজ। জমিতে লতাপাতার ফাঁকে ফাঁকে হাসছে হাজারো তরমুজ। তরমুজের সঙ্গে হাসছেন তিন বন্ধুও।

তরমুজ ক্ষেতে বসেই চাষি মানিক বলেন, বলেশ্বর নদীতে এখন আর আগের মতো মাছ পাই না। তাই অভিজ্ঞতা ছাড়াই চার মাস আগে তিন বন্ধু মিলে তরমুজ চাষ শুরু করি।

খরচের হিসাব তুলে ধরে তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমির জন্য বছরে ৮ হাজার করে মোট ২৪ হাজার টাকা, উন্নত তরমুজের বীজ ৩৫ হাজার টাকা, সার ও বালাইনাশক বাবদ ৮০ হাজার টাকা, নেটের বেড়া ও পানি সেচ বাবদ সব মিলিয়ে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রত্যেকে ৬০ হাজার টাকা করে বিনিয়োগ করেছি।

তার বন্ধু লোকমান বলেন, তিন বন্ধু মিলে প্রতিবেশীদের তিন বিঘা জমি নগদ টাকায় বন্দোবস্ত নিই। আশা করছি মৌসুম শেষে খরচ বাদ দিয়ে আমাদের প্রায় তিন লাখ টাকা লাভ থাকবে।

বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রথম ধাপে ৪০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে কেটে জমিয়ে রাখা তরমুজের মূল্য এক লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হবে। এছাড়া মাঠে থাকা তরমুজ ও ফলন অনুযায়ী আরও দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারব।

চাষি মামুন বলেন, তিনজনের সমান বিনিয়োগ। তিনজনই মাঠে সমান কাজ করি। সমান ভাগে লাভের টাকা বণ্টন করি। 

তিনি বলেন, এখানে তরমুজ আকারে যেমন বড় হয়, তেমনি খেতে অনেক সুস্বাদু। পাইকাররা এসে ক্ষেত থেকেই প্রতি কেজি তরমুজ ৩০ টাকা ও প্রতি মণ ১২ হাজার টাকা দরে কিনে নিচ্ছেন। আমাদের এলাকার জমিতে একবার আমন ধান ফলানোর পর সারা বছর পতিত অবস্থায় জমি পড়ে থাকে। পতিত এই জমি ব্যবহার করে শরণখোলায় পরিকল্পিত তরমুজ চাষের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে দাবি করেন মামুন। 

স্থানীয় নুর মুহাম্মদ বলেন, এই প্রথমবারের মতো আমাদের এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ হয়েছে। সামনের দিনে আমরাও পতিত জমিতে তরমুজ চাষ করব।

শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন জানান, তরমুজ চাষি তিনজনই খুব পরিশ্রমী। তাদের এ তরমুজ ক্ষেত দেখতে মানুষ ভিড় করছে। কেউ কেউ ক্ষেত থেকে টাটকা তরমুজ কিনছে। সব মিলিয়ে একটা উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, বলেশ্বর ও ভোলা নদীর তীরবর্তী শরণখোলা উপজেলায় তরমুজ চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলের পানিতে সহনশীল মাত্রার লবণাক্ততা আছে। যা তরমুজ চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এছাড়া কম সময়ে, কম পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়ার জন্য তরমুজ একটি ভালো অর্থকরী ফসল। উপজেলার এক ফসলি ও পতিত জমিতে তরমুজ চাষে সফলতা দেখে আগামীতে তিন ফসলি জমিতে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তরমুজ চাষে আগ্রহী চাষীদের উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তাও দেওয়া হবে। 

তানজীম আহমেদ/আরএআর