সাভারের আশুলিয়ায় প্রেমের অপরাধে সালিশ বসিয়ে মাদকসেবী আখ্যা দিয়ে মারধর করায় রবিউল ইসলাম মোহন (১৫) নামে এক কিশোর আত্মহত্যা করেছে। শুক্রবার (০৮ এপ্রিল) নিজ ঘরের আঁড়ার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সে।

রবিউল ইসলাম মোহন আশুলিয়ার আউকপাড়া এলাকার আদর্শ গ্রামের এ ব্লকের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। সে আশুলিয়ার প্রোগ্রেসিভ মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। 

মোহনের ভাই সুমন হাওলাদার বলেন, প্রতিবেশী এক মেয়ের সঙ্গে মোহনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই প্রেমে ভাটা পড়লে মোহন ঘুমের ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়ে। আমরা বিষয়টি জেনে তাকে অনেক বোঝালেও কাজ হয়নি। প্রেমের কারণে তাকে মাদকের অপবাদ দেওয়া হয়েছে। পরে অপমানে সে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় পুলিশ কী মামলা দিয়েছে তা আমি বলতে পারব না। 

তিনি আরও বলেন, আমার পরিবারের ওপর দিয়ে এমনিতেই অনেক ঝড় বয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগে মা মারা গেছে। তিন বছর আগে ধর্ষণের শিকার হয় ছোট বোন। এর কিছু দিন পর সে পানিতে ডুবে মারা যায়। আমাদের বাড়িতে প্রায় দুই মাস আগে আমার শ্যালক ও তার বউ বেড়াতে এসেছিল। এ সময় দেহ ব্যবসার অপবাদ দিয়ে আমার বাবা ও ছোট ভাইকে পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর করেছিল স্থানীয় মাতবর জাহাঙ্গীর হোসেন অপু ও তার লোকজন। আমরা গরিব বলে নানাভাবে নির্যাতিত। নতুন করে কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাই না। তবে মেয়ের পরিবারের অন্যায় বিচার ও মাতবর অপু মিয়ার বিচার চাই। আমার আর কিছু বলার নেই।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন সুমন। তিনি বলেন, আমি বিচারের দিন ছিলাম না। আমার বউ ও বোনের কাছ থেকে শুনেছি। আমি মুরগির গাড়ির হেলপার। ভোর ৩টায় কাজে বের হয়ে যাই। ফেরার ঠিক-ঠিকানা নেই। প্রতিদিন ২৫০ টাকা রোজগার করি। প্রেমের অপরাধে শুক্রবার মোহনকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয় মাতবররা। এ সময় স্থানীয় মাতবররা মাদকসেবী আখ্যা দিয়ে কান ধরে উঠবস করায়। একইসঙ্গে নাকে খত দিতে বাধ্য করান। পরে সেখান থেকে দৌঁড়ে বাড়িতে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় মোহন। 

অনেক সময় পর দরজা না খোলায় ভেঙে ভেতরে গিয়ে দেখি, ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে মরে আছে আমার ভাই। পরে মানুষের কাছে ভিক্ষা করে ভাইয়ের দাফনের ব্যবস্থা করেছি। আত্মহত্যার আগে মোহন তার খাতায় লিখে যায়, ‘সুমনা তোমাকে কত ভালবাসি তুমি তা জানো না, তিনদিন ধরে কেন তুমি কথা বলো না। তোমার বাবা ঢাকায় পাঠিয়ে দিল। আর আমাকে রেখে তুমি চলে গেলে, আমি তা সহ্য করতে পারছি না।’

স্থানীয় আউকপাড়া প্লট মালিক সোসাইটির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন অপু বলেন, বাস্তুহারা সমাজ কল্যাণ সেবা সংঘ নামে একটি সংগঠন আছে। সেই অফিসে নিয়ে সংগঠনের সভাপতি মুনিরুজ্জমান খোকনসহ সংগঠনের অন্যান্যরা আব্দুল হালিম মোবারক, সেলিম, মজিবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত থেকে বিচার করেছেন। আমি ছিলাম না।

বিচার শেষে সেখানে গিয়ে জানতে পারি, মূলত কিশোর ছেলেটিকে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের করায় সে আত্মহত্যা করেছে। শুনেছি ওই কিশোরকে নাকে খত দেওয়া হয়েছে। এখন তারা প্রেমের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। নিহতের পরিবারের খোঁজ নিচ্ছে ও টাকাও দিচ্ছে। তবে আমি দুই মাস আগে একটি অসামাজিক ঘটনা নিয়ে নিহত মোহনের বাবাকে মারধর করতে গিয়েছিলাম, এটা সত্য।  

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, পরিবারের লিখিত এজাহারের ভিত্তিতে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার যদি বিচার সালিসের বিষয়ে অভিযোগ করেন, তাহলে আমরা তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আমরা এখনো এমন কোনো অভিযোগ পাইনি।

মাহিদুল মাহিদ/এসপি