মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল ধর্ম অবমাননার মামলায় ১৯দিন কারাভোগের পর গতকাল রোববার (১০ এপ্রিল) বিকেল ৫টার দিকে কারামুক্ত হয়েছেন। কারামুক্ত হওয়ার পর পরই তিনি রাজধানীর ঢাকায় তার এক আত্মীয়র বাড়িতে গেছেন। 

শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় সেখানে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। ৪-৫দিন পর তিনি নিজ বাড়িতে ফিরবেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। তবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তার পরিবার। হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের পরিবারের দাবি- ওই এলাকার কতিপয় ব্যক্তি পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। 

সরেজমিনে সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের স্কুল ভবনের কোয়ার্টারে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে সেখানে হৃদয়ের স্ত্রী ববিতা হালদার, ছেলে শ্রেষ্ঠ মণ্ডল, মেয়ে সৃষ্টি মণ্ডল,ববিতা হালদারের বড় ভাই বাদল হালদার ও তার মা রেনুকা হাওলাদার অবস্থান করছেন। তবে ওই কোয়ার্টারে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ও উৎকণ্ঠায় আছেন বলে জানান। 

হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের শাশুড়ি রেনুকা হাওলাদার (৮০) ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২০ দিন ভয়ে আমরা বাড়ির বাহিরে যাইনি। সোমবার সকালে বাড়ি থেকে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। কয়েকজন ছেলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। বাসার ছাদে গিয়ে সকালে হাঁটছিলাম, বাসার সামনের রাস্তা থেকে ইট হাতে একজন মধ্যবয়স্ক লোক মারতে তেড়ে আসছিল। ভয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে যাই।

বাড়ির গৃহকর্মী অনিতা সাহা বলেন, আমি এ বাড়িতে রান্নার কাজ করি। মানুষজন আমাকেও ভয় দেখায়। রোববার দুপুরে হৃদয় স্যারের জামিন হওয়ার কথা সবাই জানতো। স্যারের পরিবারে সবাই আদালতে গিয়েছিল। আমি আর স্যারের শাশুড়ি বাড়িতে ছিলাম। তিন যুবক এসে স্যারকে উদ্দেশ করে বলে- ‘কিরে বাড়িতে আইছস।’

এর আগে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই তার পরিবারের সদস্যরা বারবার নিরাপত্তার কথা বলে আসছিলেন। গতকালও জামিন শুনানি শেষেও তার পরিবার নিরাপত্তার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।

হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হালদারের বড় ভাই বাদল হালদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বাসার এখানে যে পরিস্থিতি, তা মোটেও ভালো না। আমরা হৃদয়কে যে এই বাসায় আনবো সে ভরসা পাচ্ছি না। আমার মা আজ সকালে  ছাদের ওপর হাঁটতে ছিল, রাস্তা থেকে মধ্যবয়সী এক লোক বলে- ‘ওই বুড়ি তুই বাসার ভেতরে ঢোক,  নাইলে ইট মারব।’ পরে মা ভয় পেয়ে আড়ালে চলে যায়। 
আমি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হৃদয় এবং তার বাসার নিরাপত্তা দাবি করছি। 

তিনি বলেন, এখন হৃদয়ের শারীরীক অবস্থা খারাপ। এজন্য ঢাকায় চিকিৎসা করাচ্ছে। হৃদয় এখন আমার অপর এক বোনের বাসায় ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় আছে।

বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হৃদয় মণ্ডল খুব ভালো শিক্ষক। তার পাঠদান চমৎকার। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে খুব প্রছন্দ করে। তার বিরুদ্ধে সাজানো একটা ফাঁদ ছিল। তার পেছনে বাইরের একটি শক্তি জড়িত ছিল। কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে দিয়ে বাইরের শক্তিটি এ ধরনের জঘন্য কাজটি করিয়েছে।  আমার স্কুলে মোবাইল নিয়ে আসা নিষিদ্ধ। তারপরও স্কুলে কিছু ছাত্র-ছাত্রী লুকিয়ে মোবাইল এনে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আমি বিধি মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। 

তিনি বলেন, এর সঙ্গে সারা স্কুল জড়িত না। কিছু ছাত্র-ছাত্রী ও বহিরাগতরা মিলে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।  ২১ মার্চ স্কুল ছুটির পর কিছু ছাত্র-ছাত্রী এসে বলে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল ধর্ম আবমাননা করেছেন।  আমি ওদের কাছ তিন দিনের সময় নিলাম, শিক্ষককে শোকজ করলাম, তাদের আশ্বস্ত করলাম। তারপরও স্যারের বাসায় ওরা হামলা করল। হামলার সময় স্কুলের ছাত্র ও বহিরাগত লোক ছিল।

প্রধান শিক্ষক বলেন, যে কোনো সময় চাইলেই হৃদয় মণ্ডল স্যার স্কুলে যোগদান করতে পারেন। তার  স্কুলে ফিরতে কোনো বাধা নেই, আবার ছুটি চাইলেও নিতে পারেন। তার সঙ্গে আমার মুঠোফোনে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন- তার শরীর অসুস্থ ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) সুমন দেব ঢাকা পোস্টকে বলেন, সার্বক্ষণিক আমাদের প্রশাসনের লোক ওই পরিবারকে মনিটরিং করছে। ভয়ের কিছু নেই। তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

ব.ম. শামীম/আরএআর