যশোরের চৌগাছা উপজেলার প্রায় ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাজ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই উপজেলার সিংহঝুলী-গরীবপুর সড়কে হাত দিতেই ওঠে যাচ্ছে রাস্তার কার্পেটিং।

ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুরু থেকে সড়কটিতে নিম্নমানের কাজ হচ্ছিল। বাধা উপেক্ষা করে ঠিকাদার কাজ অব্যাহত রাখে। তবে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে, কার্যাদেশ অনুযায়ীই ঠিকাদার কাজ করেছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সড়কের বিটুমিন ও কার্পেটিং তুলে এনে আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা চলছে।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে যশোরের চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলী-গরীবপুর সড়কের দেড় কিলোমিটার বা ১৫শ মিটার পুনঃসংস্কারের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। প্রায় ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ কাজটি পান যশোরের ঠিকাদার ইসরাইল ট্রেডার্স। ২০২১ সালের নভেম্বর কাজ শুরু হয়। যা শেষ হয়েছে চলতি মাসের ১৭ এপ্রিল। এলজিইউডি কার্যাদেশ অনুযায়ীই শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুনে। গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের আওতায় সড়ক সংস্কারের কাজটি দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি চৌগাছা)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্কার কাজ শুরুর পর থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজন একাধিকবার উপজেলা প্রকৌশলী জুলহাস উদ্দিনকে জানালেও কোনো কাজ হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের পাথর, ইট, বালু, খোয়া ও ম্যাকাডম দিয়ে কাজ করছিলেন ঠিকাদার। বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ জানালেও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদার। এর ফলে কাজ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে আসছে সড়কের পিচ। নিম্নমানের এই কাজ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবাদস্বরূপ স্থানীয় লোকজন নতুন সড়কের বিভিন্ন স্থানের কিছু অংশে পাতলা পিচ তুলে ফেলেছেন এবং সড়কের সেই অংশের ছবি ও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

সিংহঝুলী ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য তাসলিমা খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যখন এই সড়কের খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলে, তখন আমি কাজের অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে তদারকি করতে আসি। এ সময় নিম্নমানের ইট-পাথর, বিটুমিন দেওয়ার সত্যতা পায়। পরে বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদার ও সংশ্রিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলি। তারা জানায়, এখনো কাজ শেষ হয়নি। আমাদের থেকে কাজ ঠিকভাবে বুঝে নিয়েন।

সিংহঝুলী ইউনিয়নের মল্লিকবাড়ি খাঁ পাড়ার বাসিন্দা রফি বিশ্বাস, লিটন মল্লিক, আসাদ খানসহ ৬-৭ জন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার এত টাকা খরচ করে রাস্তা করেছে, সেখানে ঠিকাদারদের দুর্নীতির কারণে সব টাকা জলে গেল। হাত দিয়ে রাস্তার কার্পেট তোলা যাচ্ছে, তাহলে ভারী যানবাহন চলাচল করবে কীভাবে? সরকার রাস্তা করতে কি কম টাকা দেয়? সব ঠিকাদার খেয়ে ফেলেছে। ঠিকাদারের জন্য সরকারের বদনাম। নিম্নমানের পাথর, ইট, বালু, খোয়া ব্যবহার করে আমাদের এই রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী করে ঠিকাদার চলে গেছে। আমরা সরকারের কাছে এত বড় অনিয়মের বিচার চাই।

চৌগাছা উপজেলা এলজিইডি উপ-সহকারী প্রকৌশলী বুলবুল আহমেদ বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এই সড়কের দেখভালের দায়িত্বে আমি না। এই সড়কের দায়িত্বে প্রকৌশলী জুলহাস উদ্দিন ছিলেন। তিনি অসুস্থ। অভিযোগ পাওয়ার পর সড়কের কয়েক জায়গায় আমরা নতুন করে কার্পেটিং করে রুলার করেছি। আশা করি আর সমস্যা হবে না।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আনিছুজ্জামান বলেন, বৃহস্পতিবার আমরা অভিযোগটি পেয়েছি। ইতোমধ্যে সড়কটি আমি সরেজমিনে পরিদর্শন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও বলেছি। বিষয়টি বর্তমানে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। পরীক্ষার জন্য সড়কের বিটুমিন ও কার্পেটিং তুলে এনে আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা চলছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ঠিকাদার কাজ করেছে। তারপরও অভিযোগে ঠিকাদার দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাহিদ হাসান/এসপি