প্রতি বছরেই ঈদযাত্রায় বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয় উত্তরবঙ্গের ঘরমুখো সাধারণ মানুষদের। এবার ঈদেও এর ব্যতিক্রম ঘটবে না বলে মনে করছেন অনেকেই।

তবে কর্তৃপক্ষ মনে করছে এবারের ঈদযাত্রায় সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে তেমন কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হবে না যাত্রীদের। এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির করতে আগামীকাল সোমবার (২৫ এপ্রিল) খুলে দেওয়া হচ্ছে সিরাজগঞ্জের নবনির্বাচিত নলকা সেতু।

রোববার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা-বগুড়া ও ঢাকা- সিরাজগঞ্জ মহাসড়ক পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের পরিচালক ওয়ালিউর রহমান।

তিনি জানান, উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলা দক্ষিণবঙ্গের ৬টি জেলার মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়ক বিভাগ সচেষ্ট। মহাসড়কের ঝুকিপূর্ণ স্থানগুলোর সংস্কার কাজও প্রায় শেষের দিকে। মানুষ যাতে ভোগান্তি ছাড়াই নিজ পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেন সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। যানজট নিরসনে আগামী ২৫ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের নলকা সেতুসহ মহাসড়কের আরও কয়েকটি সেতু খুলে দেওয়া হবে। 

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা এবং সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তরের ১৬টি ও দক্ষিণের ৬টি জেলায় চলাচলকারী যানবাহনের বঙ্গবন্ধু সেতু গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার মহাসড়ক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। প্রতি বছরেই ঈদ মৌসুমে এই মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সৃষ্টি হওয়ায় যানজটে নাকাল হতে হয় যাত্রীদের। এ বছর মহাসড়কজুড়ে চলা নির্মাণ কাজ ও অসংখ্য খানাখন্দে যানজটের আতঙ্ক বেড়েছে। এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে এবং ঈদের সময় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার যানবাহন চলাচল করে থাকে।।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের পক্ষ থেকে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কে সৃষ্ট খানাখন্দ সংস্কার, কড্ডা, পাচলিয়াসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অস্থায়ীভাবে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও আগামীকাল সোমবার (২৫ এপ্রিল) ফুলজোড় নদীর ওপর নির্মিত নলকা সেতুর ঢাকা-উত্তরবঙ্গগামী লেন চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন নলকা সেতুর এক লেন দিয়ে উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহন চলাচল করবে। আর ঢাকামুখী যানবাহন চলাচল করবে পুরাতন নলকা সেতু দিয়ে। এতে যানজটযুক্ত এই সেতু এলাকা যানজটমুক্ত হবে বলেই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম তরফদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদযাত্রায় মানুষের ভোগান্তি কমাতে আগামীকাল ২৫ এপ্রিল নলকার নতুন সেতুর এক লেন ছেড়ে দেওয়া হবে। শুধু তা-ই নয়, খানাখন্দ ও উঁচু-নিচু জায়গাগুলোয় ইট, পাথর ও বিটুমিন দিয়ে সমতল করা হচ্ছে। যা আগামী ২৭ এপ্রিলের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তারপর মহাসড়কের সকল প্রকার কাজ বন্ধ রাখা হবে।

তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মহাসড়কের সব লেন খুলে দেওয়া হবে। আশা করি উত্তরবঙ্গের ঈদ যাত্রায় সিরাজগঞ্জ অংশে মহাসড়কের কোথাও কোনো লেন বন্ধ থাকবে না।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান বলেন, এবার মহাসড়কে ভোগান্তি কমাতে ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করতে ইতোমধ্যে পুলিশের ৫০ সদস্য প্রস্তুত আছেন। এ ছাড়া পুলিশের আরও ২৫০ সদস্য চেয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

মহাসড়কে চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে কোনো প্রকার চাঁদাবাজি সাধারণত হয় না। আর হলেও সেটা বরদাশত করা হবে না। 

মহাসড়কে তিন চাকার যানের ব্যাপারে ওসি লুৎফর রহমান বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলা দিচ্ছি। এ ছাড়া ঈদকে সামনে রেখে আমরা এ বিষয়ে আরও কঠোর হবো। 

সিরাজগঞ্জের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) মো. সালেকুজ্জামান খান সালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদযাত্রায় মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের অন্তত ১০ জন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ও ট্রাফিক সার্জেন্টের পাশাপাশি ৯ জন সহকারী সার্জেন্টসহ শতাধিক ট্রাফিক সদস্য কাজ করবেন। আমরা মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখার পাশাপাশি সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করব।

বগুড়া রিজিয়ন হাইওয়ের পুলিশ সুপার মুনশী শাহাবুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিশেষ করে নলকা সেতু এলাকা নিয়ে বেশি চিন্তিত। আমরা ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেছি। ঈদের এক সপ্তাহ আগ পর্যন্ত আমরা সেখানকার অবস্থা ও কাজের সার্বিক দিক পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেব। এ ছাড়া ঈদযাত্রায় মহাসড়কে ভোগান্তি কমাতে আমরা চাহিদা অনুযায়ী ফোর্স দেওয়ার চেষ্টা করব।

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষের দুর্ভোগ দূর করতে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে ২১ রমজান থেকেই জেলা পুলিশ কাজ শুরু করেছে। তবে পুরোদমে কাজ শুরু হবে ২৩ রমজান থেকে। যা চলবে ঈদের পঞ্চম দিন পর্যন্ত। তিন শিফটে ভাগ হয়ে ৮ ঘণ্টা করে ২৪ ঘণ্টাই পুলিশ দায়িত্বে থাকবে। ৪৫০ থেকে ৫০০ জন পুলিশ সদস্য এখানে কাজ করবেন। পাশাপাশি মহাসড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত আক্রান্ত গাড়ি সরিয়ে নিয়ে মহাসড়ক ক্লিয়ার রাখতে আলাদা টিম কাজ করবে। 

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর