গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে খুব দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ লেক কাপ্তাই হ্রদের পানি। এ হ্রদের পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাওয়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কাপ্তাই হ্রদের পানির ওপর নির্ভরশীল দেশের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন।

ফলে কেন্দ্রের ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ২টি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে ৫৯ মেগাওয়াট।

শিগগির বৃষ্টিপাত না হলে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর আরও নিচে নেমে গিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন চরম হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা কমতে থাকে। এপ্রিল মাসের শুরুর দিক থেকে তীব্র দাবদাহের কারণে হ্রদের পানি হ্রাস পেতে থাকে খুব দ্রুত। ফলে হ্রদের পানির ওপর নির্ভরশীল কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। বর্তমানে হ্রদে পানির উচ্চতা কমে যাওয়ায় কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ২টি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। দ্রুত বৃষ্টিপাত না হলে এই দুটি ইউনিট থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আবদুজ্জাহের জানান, সচরাচর ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে বৃষ্টি হয় না। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যায়। তখন পানির অভাবে কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। তবে কোনো কোনো সময় মার্চ ও এপ্রিল মাসেও ভারী বৃষ্টিপাতের রেকর্ড রয়েছে। সেই রকম বৃষ্টিপাত হলে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বাড়বে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়ানো সম্ভব হবে।

তিনি আরও জানান, আজ (২৬ এপ্রিল) রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) অনুযায়ী কাপ্তাই হ্রদে পানি থাকার কথা ৮৩ ফুট মিনস সি লেভেল (এমএসএল)। কিন্তু বর্তমানে হ্রদে পানি আছে ৭৭.২৬ ফুট। কাপ্তাই হ্রদে পানির ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট।

৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ২টি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা আরও বলেন, দুটি ইউনিট হলো ৩ ও ৫ নং ইউনিট। যেগুলো থেকে যথাক্রমে ২৯ ও ৩০ সর্বমোট ৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। যার পুরোটাই জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন করা হচ্ছে। এখন পানি কম, তাই সব কটি ইউনিট একযোগে চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রের ১ নং ইউনিট বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রের ২ ও ৪ নং ইউনিট পানির অভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরিভাবে কাপ্তাই হ্রদের পানির ওপর নির্ভরশীল। কাপ্তাই হ্রদে যত বেশি পানি থাকবে, বিদ্যুৎ উৎপাদন তত বেশি হবে। বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদ পানিতে পরিপূর্ণ থাকাকালীন কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট পুরোদমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হয়। ৫টি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট।

মিশু মল্লিক/এনএ