চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের সরোজগঞ্জ বাজারে ‘নড়াইল আশার আলো ফাউন্ডেশন’ নামে একটি বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার নামে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

তবে এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক আফরোজা খানম বলছেন, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে আমাদের কোনো শাখা নেই। সোহেল রানা নামের যে ব্যক্তি ওই সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রতারণা করছেন বলে শুনছি, সে এক সময় এই এনজিওতে চাকরি করলেও অনিয়মের কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে অনেক আগে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের সরোজগঞ্জ সরকারি ফুড গোডাউনের অদূরে চতুর্থ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিয়ে ‘নড়াইল আশার আলো ফাউন্ডেশন’ নামে একটি এনজিওর শাখা খোলেন সোহেল রানা নামে একজন। তিনি নিজেকে কখনো সোহেল আবার কখনো রানা নামে পরিচয় দেন। তার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলা সদরের সাগান্না ইউনিয়নের বাদপুকুর গ্রামে। 

ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের মেয়ে রত্না খাতুন। তাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২১ হাজার ৭০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অভিযুক্ত সোহেল রানা।

আরেকজন হলেন একই গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে সাহাবুর হোসেন। তিসি অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। মানবিক বিভাগে পড়াশোনা করলেও তাকে অ্যাকাউন্টস অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তার কাছ থেকে ২৭ হাজার ৩০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া সোহেল রানা তার নিযুক্ত কিছু মাঠকর্মীর মাধ্যমে এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ঋণ দেওয়া এবং অল্প বিনিয়োগে বেশি মুনাফা দেওয়ার প্রলোভনে ৫০০ টাকা করে সদস্য ভর্তির কথা বলে ১১০০ টাকা করে
নিয়েছে। 

সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের নার্গিস খাতুন নামে এক গৃহবধূ বলেন, ছাগলের জন্য ঋণ দেওয়ার কথা বলে ভর্তি করে আমাদের কাছ থেকে ৫০০ করে টাকা নিয়েছে। 

একই গ্রামের মাছিদুল ইসলামের স্ত্রী তাছলিমা খাতুন বলেন, ঋণের আশায় আমরা ৩০-৪০ জন একসঙ্গে ৫০০ টাকা করে দিয়েছি। 

ভুক্তভোগী সাহাবুর রহমান জানান, আমার এলাকার প্রায় ২৭০ জন সদস্যের কাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা তোলার পর আর আসেননি। 

এদিকে গত সোমবার সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের সেবা এনজিওর মালিক যুবলীগ নেতা রাশেদুজ্জামান পলাশের অফিসের আসবাবপত্র ক্রয় করে টাকা না দিলে পার্শ্ববর্তী কালুপোল বাজারে সোহেল রানার মোটরসাইকেল আটকে টাকা আদায় করেন তিনি। এ সময় খবর পেয়ে এলাকার ভুক্তভোগীরা সেখানে একত্রিত হয়ে টাকা ফেরত চান।পরে অভিযুক্ত সোহেল রানা টাকা নিয়ে আসার কথা সেখান থেকে পালিয়ে যান।

গড়াইটুপি গ্রামের প্রবাসী আবু বাক্কারের ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাকে ৩০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে অ্যাকাউন্ট খুলে ১-২ হাজার টাকার ডিপিএস করার কথা বলেন। পরে ঋণ দেওয়ার আগে সঞ্চয় বাবদ ৫০ হাজার টাকা চান। আমাদের এখানকার অনেকেই ১১০০ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে প্রতারণা বুঝতে পেরে আবার টাকা ফেরত নিয়েছেন। 

নড়াইল আশার আলো ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে আফরোজা খানম নামে নির্বাহী পরিচালক জানান, সোহেল রানা এক সময় আমাদের স্টাফ ছিলেন। আমাদের অফিস হচ্ছে নড়াইলের রূপগঞ্জে। চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে আমাদের কোনো শাখা নেই। তিনি একজন প্রতারক। এলাকার মানুষকে সম্ভবত ঠকাচ্ছে। আপনারা তাকে থানায় সোপর্দ করেন। 

অভিযুক্ত সারোয়ার সোহেল রানার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। 

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, এই এনজিওর সম্পর্কে আমি জেনেছি।  গ্রাহকদের অভিযোগ পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। 

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক মৌমিতা পারভীন জানান, এ ধরনের এনজিও সম্পর্কে আমরা অবগত নই। তবে বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখব। 

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূইয়া জানান, ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।

আফজালুল হক/এসপি