ফরিদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাতে সালথা উপজেলার যদুনন্দী ও বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহত বৃদ্ধের নাম নান্নু ফকির (৬৫)। তিনি সালথার যদুনন্দী গ্রামের বাসিন্দা মৃত হাতেম ফকিরের ছেলে। তিনি দুই ছেলে ও তিন মেয়ের বাবা।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালমারীর রূপাপাত ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সঙ্গে রূপাপাত ইউনিয়নের বামন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান কাইয়ুম মোল্লার বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধ থেকেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আরও জানা গেছে, সালথার যদুনন্দী এবং বোয়ালমারীর রূপাপাত কুমার নদের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত। নদের মাঝে পারাপারের জন্য একটি সেতু রয়েছে। কাইয়ুম মোল্লা যদুনন্দী গ্রামের বাসিন্দা হলেও জনপ্রিয়তার কারণে তিনি বোয়ালমারীর রূপাপাত বামন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হন। এরপর থেকে রূপাপাত ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুরের সঙ্গে কাইয়ুম মোল্লার বিরোধ তুঙ্গে উঠে। 

আরও জানা যায়, ২৪ এপ্রিল যদুনন্দী গ্রামের দুই তরুণ পাশের রূপাপাত বাজারে গেলে ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুরের সমর্থক তাদের মারপিট করে। এ ঘটনায় পাশের ডহননগর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে একটি মামলাও হয়। 

এদিকে বুধবার সন্ধ্যার দিকে যদুনন্দী গ্রামের বাসিন্দা মো. ইলিয়াসের ছেলে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেদী (১৪) রূপাপাত বাজারে গেলে চেয়ারম্যানের সমর্থকরা তাকে মারপিট করে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে কাইয়ুম যদুনন্দী থেকে তার লোকজন নিয়ে সেতু পার হয়ে এগুতে চাইলে মিজানুর রহমানের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। 

এতে বৃদ্ধ নান্নু ফকিরসহ উভয় পক্ষের ১২ জন আহত হন। পরে সালথা ও বোয়ালমারী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাবার বুলেট, শর্টগানের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আট পুলিশ সদস্য আহত হয়।

এদিকে আহত নান্নু ফকিরকে পাশের গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত সোয়া ৯টার দিকে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাইয়ুম মোল্লার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সংঘর্ষের সময় ইটের আঘাতে নান্নু ফকির নামে একজন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। এলাকার পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে।

তিনি বলেন, সালথা থানার পুলিশ শর্টগানের ১৮টি গুলি, একটি সাউন্ড গ্রেনেড ও পাঁচটি কাদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে সালথা থানার এসআই মো. মিরাজ হোসেনসহ পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন।

সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর বলেন, বোয়ালমারী থানার পুলিশ ১৪টি রাবার বুলেট, শর্টগানের ১৫টি গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ডহননগর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোক্তার হোসেনসহ পুলিশের তিন সদস্য আহত হন।

তিনি বলেন, দুই থানার (সালথা ও বোয়ালমারী) পক্ষ থেকে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জহির হোসেন/এসপি