কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (৩ মে) রাতে নিহত মতিয়ার মন্ডলের ভাই আশরাফুল বাদী হয়ে ঝাউদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান কেরামত উল্লাহকে প্রধান আসামি করে ৬৭ জনের বিরুদ্ধে ইসলামী বিশ্বিবিদ্যালয় থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।  

অপরদিকে সংঘর্ষে নিহত রহিম মালিথার ছেলে রফিকুল বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ আনিস মেম্বরকে প্রধান আসামি করে ২৭ জনের বিরুদ্ধে একই থানায় আরেকটি হত্যা মামলা করেছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান রতন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে বিকেলের দিকে জানাজা শেষে তাদের দাফন করা হয়।

নিহতরা হলেন- আস্তানগর গ্রামের দাউদ মন্ডলের ছেলে লাল্টু (৪০), মৃত হাসেম আলীর ছেলে কাশেম (৫০), মৃত আবুল আলীর ছেলে রহিম (৫৫) ও আজিজের ছেলে মতিয়ার (৪৫)।

নিহত মতিয়ার, লাল্টু ও কাশেম বর্তমান ঝাউদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসানের সমর্থক এবং আব্দুর রহিম মালিথা প্রতিপক্ষ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত আলীর সমর্থক।

বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতয়েন করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো এলাকাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুরো আস্থানগর গ্রাম পুরুষশূন্য রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে আবারও সংঘর্ষের আশঙ্কায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।

পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আস্তানগর বাজারে কেরামত আলীর সমর্থক আব্দুর রহিম মালিথার সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মেহেদী হাসানের সমর্থকরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে রহিমের ওপর হামলা চালায়। এ সময় লাঠির আঘাতে রহিম মাটিতে পড়ে যান।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মেহেদীর সমর্থকরা স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। ইতোমধ্যে রহিমকে মারধরের সংবাদ পেয়ে কেরামত আলীর সমর্থকরা পাল্টা মেহেদীর সমর্থকদের ওপর হামলা চালালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে মেহেদীর সমর্থকরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে এই সুযোগে কেরামত আলীর সমর্থকরা লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আঘাত করে। এ সময় মেহেদীর সমর্থক মতিয়ার, লাল্টু ও আবুল কাশেম গুরুতর জখম হন। 

পরে খবর পেয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন ১০ জন। 

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে ঝাউদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান কেরামত উল্লাহর সঙ্গে ফজলু মন্ডলের বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে সোমবার বিকেলে চারজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আসামিদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।  

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। 

রাজু আহমেদ/আরএআর