ঠাকুরগাঁওয়ে ফিলিং স্টেশনগুলোতে পেট্রল ও অকটেন পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে বিশেষ করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেল চালকরা। এক ফিলিং স্টেশন থেকে আরেক ফিলিং স্টেশনে গেলেও পাওয়া যাচ্ছে না তেল। 

বৃহস্পতিবার (৫ মে) বেলা ১১টায় জেলা শহরের ফিলিং স্টেশনগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের বাঁধন কাকন ফিলিং স্টেশন, চৌধুরী ফিলিং স্টেশন, মির্জা ফিলিং স্টেশন, রুপসী বাংলা ফিলিং স্টেশন, সুপ্রিয় ফিলিং স্টেশনে পেট্রল ও অকটেন সরবরাহের ট্যাংকগুলো মোড়ানোর রয়েছে। সেখানে লিখে দেওয়া হয়েছে পেট্রল ও অকেটন শেষ। প্রায় ১৫-২০ দিন ধরে পেট্রল পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল বুধবার থেকে পাওয়া যাচ্ছেনা অকটেন। 

মোটরসাইকেল চালক রিপন আহমেদ বলেন, পাম্প মালিকদের দুর্নীতির কারণে আমাদের মোটরসাইকেল চালকদের এ ভোগান্তি। আর অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে না। সরকার পেট্রল ও ডিজেলে ভর্তূকি দেয়। কিন্তু আমরা এখন পেট্রল আর অকটেন পাচ্ছি না। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেশি এজন্য তারা সিন্ডিকেট করেছে। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিষয়টি যাতে করে খুব দ্রুত নিরসন করা হয়।

আরেক মোটরসাইকেল চালক রাকিব বলেন, পেট্রল না পাওয়ার কারণে আমরা চরম দুর্ভোগে আছি। গতকাল থেকে আবার অকটেন পাওয়া যাচ্ছে না। ঈদের সময় আমরা আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু শহরের কোথাও কোনো পাম্পে পেট্রল ও অকটেন পাওয়া যাচ্ছে না। এটি পাম্প মালিকদের কোনো ধরনের সিন্ডিকেট, নাকি সরবরাহ নেই ডিপোতে বিষয়টি প্রশাসনের খতিয়ে দেখা দরকার বলে আমি মনে করছি। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করা দরকার। 

এনামুল ফিলিং স্টেশনের প্রধান নির্বাহী মারুফ হাসান বলেন, আমরা প্রায় পনের দিন থেকে পেট্রল দিতে পারছি না। দুইদিন থেকে অকটেন সরবরাহ নেই। আমরা ডিপোতে গাড়ি পাঠিয়েছি। কিন্তু তারাও আমাদের সরবরাহ দিতে পারছে না। তারা বলছেন ডিপোতেও নাকি তেল সরবরাহ নেই। এজন্য বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকরা বিপাকে পড়েছেন। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সমস্যা সমাধানে৷ 

চৌধুরী ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার প্রফুল্ল বলেন, পার্বতীপুর, বাঘাবাড়িসহ যেসব ডিপো থেকে তেল আনা হয় সব জায়গায় যোগাযোগ করেছি। তারা বলছেন তাদের কাছেও তেল নেই। প্রায় পাঁচ ছয়দিন থেকে আমরা কোনো ধরনের পেট্রল পাইনি। 

এ নিয়ে পার্বতীপুর ডিপোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার ইনচার্জ ফারুক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিপোতে তেল না থাকার কারণে তারা ফিলিং স্টেশনগুলোতে সরবরাহ দিতে পারছে না। তবে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

ঠাকুরগাঁও পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনামুল হক ঢাকা পোস্টকে জানান, শহরের কোনো পেট্রল পাম্পে পেট্রল নেই। যে কয়েকটাতে ছিল সেগুলোও শেষ হয়ে গেছে। বগুড়া ও খুলনা ডিপোতে কথা বলেছি। তারা বলেছে তাদের কাছে আসলে তারা আমাদের পাঠাবে। আমরা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। আশা করছি বিষয়টি দ্রুত নিরসন হবে। 

তিনি বলেন, জেলায় ৩৬টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। দৈনিক পেট্রল, অকটেন ও ডিজেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার লিটার। এরমধ্যে পেট্রল ২৩ হাজার লিটার, অকটেন সাড়ে ১৬ হাজার লিটার ও ডিজেলের চাহিদা ৫০ হাজার লিটার। এখন জেলায় প্রায় ১৪ হাজার লিটার পেট্রল কম সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে পেট্রলের এ সংকট তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আসলেই পেট্রল সরবরাহ কম আছে। ডিপোগুলোতে একই অবস্থা। পার্বতীপুর ডিপোতে আমরা কথা বলেছি। সেখানেও সরবরাহ অনেক কম। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।

এম এ সামাদ/এমএএস