নতুন, শিশির এবং আবু বক্কর ছোটবেলা থেকেই বন্ধু। সম্পর্কে তারা নিকটাত্মীয় এবং প্রতিবেশী। তাদের বেড়ে ওঠাও একসঙ্গে। একসঙ্গেই চলাফেরা ও ঘোরাঘুরি করতেন তারা। 

সর্বশেষ তিন বন্ধু মিলে একসঙ্গে মোটরসাইকেলে বেড়াতে বের হন। কিন্তু তাদের আর ঘরে ফেরা হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজনের প্রাণহানি হয় একসঙ্গেই। একসঙ্গে হয়েছে জানাজাও। তিনজনকে একসঙ্গে হারিয়ে পুরো গ্রামজুড়ে চলছে এখন শোকের মাতম। ঈদ আনন্দ যেন বিষাদে পরিণত হয়েছে পরিবারগুলোতে।

বৃহস্পতিবার (৫ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় জানাজা শেষে তিনজনকেই পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে স্থানীয় কবরস্থানে।

নিহতদের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের খালপাড়া গ্রামে। সিয়াম ওরফে নতুন (১৭) সেখানকার পয়কাম ইসলামের ছেলে এবং আবু বক্করের (১৭) বাবার নাম কাব্বাস আলী। এই গ্রামেই শিশিরের (১৮) নানার বাড়ি। তার বাবা-মার বিচ্ছেদের পর নানার বাড়িতে থাকত সে।

স্থানীয়রা জানান, সিয়াম ওরফে নতুন ঢাকায় থাকে। ঈদের আগের দিন এসেছে বাড়িতে। আর শিশির এবার এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। আবু বক্কর দশম শ্রেণির ছাত্র। তিনজনের খুব ভালো বন্ধুত্ব। শিশির এবং আবু বক্কর একসঙ্গেই চলাফেরা করেন। নতুন বাড়ি এলে সেও যোগ হয় তাদের সঙ্গে। হঠাৎ করে তিনজন তরুণের অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তারা।

তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট নতুন। তার বড় ভাই সবুজ হোসেন বলেন, দুপুরেও তিন ভাই একসঙ্গে ছিলাম। কে জানে বিকেল হতে হতে আদরের ছোট ভাইকে চিরতরে হারিয়ে ফেলব। নতুন ঢাকায় থাকে, খুব ভালো মোটরসাইকেল চালাতে জানে। ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে এসেছে মোটরসাইকেল নিয়েই। কিন্তু কালকে আমার ভাই মোটরসাইকেল ড্রাইভ করেনি। আমার ভাই চালালে এমনটা হতো না।

নিহত আবু বক্করের বাবা কাব্বাস আলী বলেন, আমার চার ছেলের মধ্যে সবার ছোট আবু বক্কর। খুব নম্র, ভদ্র ছিল ছেলেটা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। স্বপ্ন ছিলো ইঞ্জিনিয়ার হবে। এজন্য অষ্টম শ্রেণি পাস করে টেকনিক্যাল স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। সব স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।

আবু বক্করের বড় ভাই হাবিবুল বাশার বলেন, আমাদের খুব আদরের ছিল আবু বক্কর। পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখত সে। খেলাধুলাতেও খুব ভালো ছিল। ভাই নাই এটা মেনে নিতে পারছি না।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার (৪ মে) বিকেলে ঈদ উপলক্ষে তিন বন্ধু মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি থেকে মডেলহাট-তালমা সড়ক হয়ে অমরখানাা ইউনিয়নে অবস্থিত মহারাজার দিঘীর পাড়ে যাচ্ছিলেন। জমাদারপাড়া নামক এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তাদের। এতে সড়কে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তারা। 

পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন, বুধবার বিকেলে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। মরদেহগুলোর সুরতহাল শেষে ওদিনই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

এমএএস