জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন এক বয়োজ্যেষ্ঠ ভিক্ষুক ও তার পরিবারের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে টেনেহিঁচড়ে থানায় নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। 

এ ঘটনায় পুলিশের চার উপপরিদর্শককে (এসআই) সাময়িক বরখাস্ত এবং দুই কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১০ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

বরখাস্ত হওয়া চার এসআই হলেন এসআই মুনতাজ আলী, সাইফুল ইসলাম, ওয়াজেদ আলী ও আলতাব হোসেন। 

প্রত্যাহারকৃত দুই কনস্টেবল হলেন মোজাম্মেল হক ও সাথী আক্তার। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন বলেন, আইন সবার জন্যই সমান। ভিক্ষুককে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটি ঠিক হয়নি। এভাবে গ্রেপ্তার করা যায় না। ঘটনাটি শোনার পরপরই আমি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সংশ্লিষ্ট চার এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দুই কনস্টেবলকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। এছাড়া তদন্ত করে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী পৌরসভার বাউসি বাজার এলাকার ভিক্ষুক আব্দুল জলিল (৬৪) ২০ শতক জমিতে বসতভিটা বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। স্থানীয় আরেক ব্যক্তি মুজিবুর রহমান সম্প্রতি ওই জমি তাদের দাবি করায় দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে মামলা হলে আদালত আব্দুল জলিলের পক্ষে রায় দেন। আদালতের আদেশ অমান্য করে সোমবার সকালে মুজিবুর রহমান দলবল নিয়ে আব্দুল জলিলের পরিবারের ওপর হামলা চালায়।  

এ সময় রামদা, লোহার রড় ও লাঠিসোটার আঘাতে আব্দুল জলিলসহ পরিবারের সবাই আহত হন। গুরুতর আহত আব্দুল জলিল (৬৪), তার স্ত্রী লাইলী বেগম (৫০), বড় ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (৩০), মেজো ছেলে ওয়াজ করোনি (২৫), ছোট ছেলে হামদাদুল হককে (১৬) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। 

এ ঘটনার পর উল্টো মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে চিকিৎসাধীন ৪ জনসহ ১৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলার পর মঙ্গলবার সকালে পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এজাহারভুক্ত চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে। হাসপাতালের শয্যা থেকে তাদের চ্যাংদোলা করে নামিয়ে টেনেহিঁচড়ে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচতলায় নেওয়া হয়। তারপর ধাক্কা দিয়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়।

কয়েক ঘণ্টা তাদের থানা হাজতে রাখার পর বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ভিক্ষুক জলিলসহ ওই চারজন এখন কারাগারে আছেন। 

ভিক্ষুক জলিলকে টেনে-হিঁচড়ে গ্রেপ্তার করার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় পুলিশের আচরণের সমালোচনা করছেন সাধারণ মানুষ।

আব্দুল জলিলের জামাতা চান মিয়া, মেয়ে জুলেখা বেগম ও ভাতিজা রানা মিয়া জানান, আব্দুল জলিল সোমবার রাতে থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ তাদের মামলা নেয়নি। উল্টো আব্দুল জলিলকে থানায় আটকে রাখা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।

ওই রাতেই আব্দুল জলিলের পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে পরদিন হাসপাতাল থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সরিষাবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা দেবাশীষ রাজবংশী জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগীদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে পুলিশ। 

এদিকে এ ঘটনায় এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাকির হোসেন সুমন তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ।

উবায়দুল হক/আরএআর/জেএস