ভারত থেকে আসা অতিরিক্ত পানিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে প্রায় তিন হাজার বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। অসময়ের বন্যায় সব কিছু হারিয়ে দিশেহারা উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিলকুজাইন, ভাটখোর, রোকনপুরগঞ্জ মৌজার কৃষকরা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুনর্ভবা নদীর উজানে ভারতীয় অংশে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে অতিরিক্ত পানি এসে অসময়ের বন্যা দেখা দিয়েছে। গত তিন দিন ধরে পুনর্ভবা নদী দিয়ে বাংলাদেশের অংশের রাধানগরের বিলগুলোতে পানি ঢুকছে। এতে বিলকুজাইন, ভাটখোর, রোকনপুরগঞ্জ মৌজার তিন হাজার বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কৃষকরা।

রাধানগর ইউনিয়নের যাতাহারা গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিলে ধান চাষ করি। তবে এমন হঠাৎ পানি এসে ধান প্লাবিত হওয়ার ঘটনা কখনো দেখিনি। মাত্র তিন দিনেই সব শেষ হয়ে গেল। জমিতে থাকা ধান কাটা বা কাটা ধান ঘরে তোলার কোনো সুযোগ পায়নি। ৭ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম, সব শেষ হয়ে গেছে। 

ধানচাষি তসিকুল ইসলাম বলেন, তিন দিন আগে থেকে ভারত থেকে পুনর্ভবা নদীর পানি আমাদের বিলে ঢুকছে। গতকাল থেকে আমার ২৫ বিঘাসহ আশপাশের সব জমির ধান তলিয়ে গেছে। অনেক কষ্ট করে ধান রোপণ করেছিলাম। কিন্তু এক পুনর্ভবা নদীর পানি সব শেষ করে দিল। এখন আমরা কী খাব?

রোকুনপুরগঞ্জের কৃষক নাজমুল হুদা বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন এনজিওতে ঋণ করে ৮ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। এখন সব পানির নিচে। কি করব, কোথায় যাব, কিছুই বুঝতে পারছি না। শতশত কৃষক আজ আমার মতো দিশেহারা। সোনার মতো ফসল আমার, কিছুই পেলাম না। 

ধানকাটা শ্রমিক এন্তাজ আলী বলেন, বিলের বেশিরভাগ ধানই মাঠে ছিল। ধান কাটতে কাটতে তিন দিন আগে পানি আসা শুরু করলে কাটা ধানগুলো নৌকায় করে পাড়ে নিয়ে আসার কাজ শুরু করি। কিন্তু এতো কম সময়ের মধ্যে এতোগুলো জমির ধান ওপরে তোলা সম্ভব নয়। চোখের সামনে সব কিছু তছনছ হয়ে গেল। কৃষকদের সব স্বপ্ন এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। 

রাধানগর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফুয়াদ আলী জানান, এবার রাধানগর ইউনিয়নের তিনটি মৌজায় প্রায় ১৬৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছিল। বর্তমানে ভারত থেকে আসা পানিতে আড়াই থেকে তিন হাজার বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ৫০ বছরে অসময়ে এমন বন্যা দেখিনি। পুনর্ভবা নদীর ভারতীয় অংশে অতিবৃষ্টির ফলে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে কৃষকের ধান। আমার ধারণা ৫৫-৬০ শতাংশ জমির ধান তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। 

এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর শুনেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তবে এখনই ক্ষতির পরিমাণ বলা সম্ভব নয়। আরও তথ্য উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারব।

তিনি আরও বলেন, বিলের বেশিরভাগ অংশেই ধানের ওপরে এখন কয়েক ফুট পানি। দীর্ঘদিন এই পানি থাকলে আর ধান পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। এই পানি না নামলে ধান কাটা সম্ভব নয়। এর আগে ২০১৭ সালে এই সময় ভারত থেকে পানি এসে ওই এলাকার কৃষকদের ধান ডুবে যায়। 

উল্লেখ্য, বোরো মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৫০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। 

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর