ময়মনসিংহে প্রাচীন সব সারিন্দা নিয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী। আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস উপলক্ষে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে 'এশিয়ান মিউজিক মিউজিয়াম'। নগরীর কাঁচিঝুলি রোডস্থ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ভবনের নীচ তলায় বুুুধবার (১৮ মে) বিকেলে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী চলবে শুক্রবার (২০ মে) পর্যন্ত।

প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে সংগ্রাহক রেজাউল করিম আসলামের সতের শতাব্দী থেকে উনিশ শতাব্দীর সংগৃহীত সারিন্দা। যার মধ্যে রয়েছে পাটগ্রাম, বুড়িমারি, কুড়িগ্রামের রহমান ফকির (৭৫) থেকে পাওয়া ৩৬৫ বছরের পুরোনো কালীরহাট, লালমনিরহাটের গুনধর বাবুর কাছ থেকে পাওয়া ৩০০ বছরের পুরানো সারিন্দা, দেবীরপাট, দূর্গাপুর, লালমনিরহাটের মনা সাধুর কাছ থেকে পাওয়া ২৫০ বছরের পুরানো সারিন্দা। 

এ ছাড়া ময়মনসিংহের গৌরীপুরের নাও ভাঙার চরের মোক্তার হোসেন ফকিরের (৫১) কাছ থেকে পাওয়া চার প্রজন্মের ব্যবহৃত দুইশ বছরের পুরোনো সারিন্দা। যেটি ব্যবহার করতেন মোক্তার ফকিরের বাবা রমজানী আলী ফকির। হালুয়াঘাট থেকে কীর্তিনিয়া মনীন্দ্র ওস্তাদজীর ব্যবহৃত ১৫০ বছরে পুরোনো সারিন্দাও রয়েছে। এ ছাড়া বিলুপ্ত ও চলমান ৬০০ বাদ্যযন্ত্র প্রদর্শনীতে থাকছে। 

এ আয়োজনের সাথে রয়েছে পুঁথি পাঠ, বাউল বৈঠক, শিশুদের সংগীত ও যন্ত্রসংগীত। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উম্মুক্ত থাকবে প্রদর্শনী। এতে সহোযোগিতায় রয়েছে নোভিস ফাউন্ডেশন ও ময়মনসিংহ বাউল সমিতি। 

বাদ্যযন্ত্র ও লোকজ সংস্কৃতি সংগ্রাহক রেজাউল করিম আসলাম বলেন, তৈরিকারক, বাদক, উপকরণ সবই হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় সারিন্দা ছিল খুবই মূল্যবান। যারা বাজাত তারাও ছিলেন মরমি লোক। এগুলো হারানো বা নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই উদ্যোগ। এই সারিন্দা কারও রান্নাঘর, কারও গোয়ালঘর থেকে পাওয়া গেছে। যাদের কাছে পাওয়া গেছে তারা জানেন না এর ঐতিহাসিক বা ঐতিহ্যগত মূল্য কত। 

অনেক সারিন্দা চুলার লাকড়ি বা মাটিতে মিশে শেষ হয়ে গেছে। এই প্রদর্শনী থেকে যদি কেউ জানতে পারে তাহলে আমাদের পুরাতন সারিন্দাগুলো বিলুপ্ত হবে না। আর নতুন প্রজন্মের কাছে এই দেশীয় যন্ত্রটি নিয়ে আগ্রহ তৈরি হবে।

রেজাউল করিম আসলামের সংগ্রহে রয়েছে লুপ্তপ্রায়, বিলুপ্ত ও চলমান প্রায় ৬০০ বাদ্যযন্ত্র। তিন পুরুষ ধরেই এই বাদ্যযন্ত্র বেচাবিক্রির সঙ্গে জড়িত আসলামের পরিবার। ময়মনসিংহ শহরের দূর্গাবাড়ি সড়কে রয়েছে 'নবাব অ্যান্ড কোং' নামে আসলামের একটি বাদ্যযন্ত্রের দোকান। ১৯৪৪ সালে দাদা নবাব আলী বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসা শুরু করেন। আসলামের দাদার পর তার বাবা জালাল উদ্দিন ব্যবসার হাল ধরেন। 

ছোটবেলা থেকেই লোকজ বাদ্যযন্ত্রর প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় আসলামের। পরে ২০০৬ সাল থেকে শুরু করেন বিরল বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ। সংগ্রহের পাশাপাশি রেজাউল করিম আসলাম এসব নিয়ে গবেষণাও করছেন। হারিয়ে যাচ্ছে যে যন্ত্রগুলো, কারিগরদের দিয়ে ওই যন্ত্রের আদলে নতুন করে আবার বাদ্যযন্ত্র তৈরি করার কাজও করছেন তিনি।

প্রদর্শনী সম্পর্কে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালার উপ-কিপার মুকুল দত্ত বলেন, এই ধরনের আয়োজন আরও বেশি হওয়া উচিৎ, তাহলে বার্তাটি সবার কাছে পৌঁঁছলে আমাদের লোকজ সম্পদ ও লোকজ ঐতিহ্য রক্ষা পাবে। 

বাউল শিল্পী আবুল কাশেম সরকার বলেন, এমন আয়োজন শিল্পী মনকে প্রফুল্ল করে। প্রদর্শনীর মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া বাদ্যযন্ত্রকে মানুষরা নতুন করে জানতে পারবে, তরুণ প্রজন্ম পরিচিত হবে।  

আয়োজনটির সঙ্গে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছেন শিল্পী জয়িতা অর্পা ও শৈল্পিক নির্দেশনায় আছেন জাওয়াতা আফনান।

উবায়দুল হক/আরআই