ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজের দুই সহকারী অধ্যাপককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের বিরুদ্ধে। এতে আহত এক শিক্ষক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) বিকেলে কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।

লাঞ্ছিত দুই শিক্ষক হলেন ওই কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন ও গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন।

এ ঘটনায় জেলাজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এ ঘটনায় অন্য শিক্ষকরা আন্দোলনের হুমকিও দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

পরে বৃহস্পতিবার রাতে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহাবুবুর রহমান।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কলেজে প্রবেশ করে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসাইনকে ‘তুই শিবির করিস’ বলে কানে-মুখে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন এবং শিক্ষকদের কমন রুমে নানা রকম হুমকি-ধমকি দিয়ে চলে যান।

ন্যক্কারজনক এ ঘটনার সঙ্গে কলেজের নন-এমপিওভুক্ত বাংলা বিভাগের প্রভাষক সুব্রত ও অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মজিদ মন্ডল জড়িত বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ সময় কলেজের দুই কর্মচারী তাপস ও সবুজ সহকারী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেনকে টানাহ্যাঁচড়া করেন। পরে বিকেল পর্যন্ত বহিরাগত ব্যক্তিরা দুদকের কিছু নথি হাতিয়ে নিতে কলেজের একটি কক্ষে তাকে আটকে রাখেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন অভিযোগ করেন, তিনি তার বিভাগের জরুরি কাজ করছিলেন। এ সময় কিছু বহিরাগত দুষ্কৃতকারী ‘তুই শিবির করিস’ বলে তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এতে তিনি কানে গুরুতর ব্যথা পান। এখন তিনি হাসপাতালে ভর্তি।

সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান জানান, কলেজ থেকে সরকারি খাতা চুরির বিষয় নিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশক্রমে একটি চুরির মামলা করা হয় আদালতে। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। এ মামলার সাক্ষী হলেন গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন। এ কারণে তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় আসামিরা। বহিরাগতদের ডেকে নিয়ে খাতা চুরি মামলার আসামি কারিগরি শাখার সাচিবিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রকিবুল ইসলাম মিল্টনসহ অন্যরা তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন।

তিনি আরও জানান, কলেজের কাজে সহকারী অধ্যাপক মো. মোশাররফ হোসেনকে সাময়িক ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়ার পর নন-এমপিও ৬১ নং সিরিয়ালধারী জুনিয়র প্রভাষক সুব্রত কুমার নন্দী ও খাতা চুরির মামলার আসামি সাবেক উপাধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মণ্ডল চুরির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বহিরাগত, কলেজের স্টাফ সবুজ ও পিয়ন তাপসের সহায়তায় ত্রাস সৃষ্টিসহ সহকারী অধ্যাপক মোশাররফকে লাঞ্ছিত করেন।

মারধরের শিকার অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হঠাৎ এসেই শিক্ষক রুমের সবাইকে বের করে দেন। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি আমাকে ‘তুই শিবির করিস’ বলে থাপ্পড় মারেন। পরপর তিনি ক্রমাগত পাঁচ-ছয়টি থাপ্পড় মারেন আমাকে।

এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, দুদকের একটি ফাইল হাতিয়ে নিতে প্রভাষক সুব্রত ও অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মন্ডল প্রথমে এসে আমাকে অপমান-অপদস্ত করেন ও মারধর উদ্যত হন। কিন্তু এ ধরনের একটি সরকারি ডকুমেন্ট নিতে হলে কালীগঞ্জ ইউএনওর সম্মতি ছাড়া দেওয়া যাবে না তাদের জানিয়ে দিই। পরে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সুবিধা করতে না পেরে লাঞ্ছিত করে আমাকে ছেড়ে দেয় তারা।

জেলা পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজে ঝামেলা হচ্ছে, এমন একটি সংবাদ পাই। পরে কালীগঞ্জ থানা পুলিশকে কলেজে পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে কলেজের একটি ফাইল নিয়ে কয়েকজন শিক্ষকের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে।

তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো অভিযোগ হাতে পাননি বলেও জানান পুলিশ সুপার।

ঘটনার ব্যাপারে জানতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/এনএ