উজানের ঢলে আকস্মিক বন্যায় সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে জেলার চার শতাধিক পুকুর। এতে মাছচাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে গেছে অনেকের। ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ ও নিজের কষ্টের সঞ্চয় বিনিয়োগ করে মাছের খামার গড়েছিলেন অনেকে। সেই খামারের মাছ আকস্মিক বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। 

খামারিরা বলছেন- রাতারাতি কিছু বুঝে উঠার আগেই পানি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য পুকুরের চারদিকে জালের বেড়া দিচ্ছেন তারা। 

সুনামগঞ্জ সদরের হাছাননগরের বাসিন্দা মো. মাহবুল আলম। তিনি পাঠানবাড়ি এলাকায় তিনটি পুকুরে প্রায় ৯ লাখ টাকা ঋণ করে ও জমানো সঞ্চয় ভেঙে মাছ চাষ করেন। উজানের পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় তার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

মাছচাষি মো. মাহবুব আলম বলেন, আমার তিন পুকুরে প্রায় ৯ লাখ টাকার মাছ চাষ করেছিলাম। কিছু বুঝে উঠার আগেই পানি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। মৎস্য অফিস কোনো খোঁজখবর নিচ্ছে না। এই ক্ষতিতে আমার পথে বসার উপক্রম হয়েছে। কীভাবে ব্যাংকের লোন পরিশোধ করবো বুঝে উঠতে পারছি না।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই আকস্মিক বন্যায় সুনামগঞ্জের প্রায় ৪০৫টি পুকুর প্লাবিত হয়ে প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। নদীর পানি যে রকম বাড়ছে তাতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। কৃষকদের সব রকমের সহযোগিতা করা হচ্ছে। 

হাছাননগরের ময়নার পয়েন্টের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম কালা মিয়া। তিনি হাছান বাহার ও বিহারি পয়েন্টসহ সুনামগঞ্জ সদরের তিন জায়গায় তিনটি পুকুরে মাছ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ঋণ নিয়ে তিনটি পুকুরে সাড়ে ছয় লাখ টাকা খরচ করে মাছ চাষ করেছিলাম। ভেবেছিলাম মাছ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হওয়া যাবে। কিন্তু গত মঙ্গলবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি পানিতে সব ভেসে গেছে। কোনো সময় পাইনি। একটু সময় যদি পেতাম তাহলে হয়তো নেট দিয়ে কিছু রক্ষা করা যেত। এখন মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য পুকুরের চারদিকে বেড়া দিচ্ছি। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া কোনো উপায় নেই আমাদের। 

ইব্রাহিমপুরের বাসিন্দা হুমায়ূন কবির বলেন, বন্যার পানিতে আমাদের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। আমাদের এলাকার মডার্ন এগ্রো ও মিজানুর রহমানের মৎস্য খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ টাকার মাছ তারা চাষ করেছিলেন। এই সময়ে বন্যা হওয়ার কথা নয়, তাই তাদের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। ফলে লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের কেবলাই গ্রামে ৬০ একর জমিতে পুকুর করে মাছ চাষ করেছেন মো. সিরাজুল ইসলাম। এই অসময়ে বন্যায় তার পুকুর তলিয়ে গেছে। এখন কোনো মতে জাল দিয়েছেন পুকুরের চারপাশে।

সিরাজুল বলেন, পুকুরে মাছের খাবার বাবদ প্রায় ৬০ লাখ টাকা তার খরচ হয়েছে। এ রকম আকস্মিক বন্যায় পুকুর ডুবে যাওয়ার চারপাশে জাল দিয়ে বেড়া দিয়েছেন। পানিতে অনেক মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এখন সরকারি সহযোগিতা চাই। 

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল জানান, জেলায় এখন পর্যন্ত ৪০৫টি পুকুর প্লাবিত হয়েছে। এতে ৩০ টন বড় মাছ ও ৩৫ লাখ ছোট পোনা মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। পানি বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি। 

আরএআর