স্ত্রীর দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সুপারিশপ্রাপ্ত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার স্বামী লিখন সাকসেনাকে (২৭) কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

শুক্রবার (২০ মে) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুনুর রশিদের আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলায় অভিযুক্ত লিখন সাকসেনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ছাগাইয়া গ্রামের মো. হুমায়ুন কবীরের ছেলে।
 
মামলার প্রধান আসামি লিখন সাকসেনাকে বুধবার রাতে ভৈরব থানা পুলিশের সহযোগিতায় লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ মোর্শেদের (পিপিএম) নেতৃত্বে ভৈরব উপজেলার ছাগাইয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পর দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে তার অপর দুই ভাই হৃদয় সাকসেনা ও অনন্ত সাকসেনাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে লালবাগ থানা পুলিশ। হৃদয় সাকসেনা মামলার ৪ নং আসামি। আর অনন্ত সাকসেনাকে বাদীর বাসার দরজা ভাঙচুরের অভিযোগে আটক করা হয়েছে। 

লিখন সাকসেনাকে বৃহস্পতিবার বিকেলে এবং হৃদয় সাকসেনাকে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। লালবাগ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলায় ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীর ও তার স্ত্রী ৩ নং আসামি শিউলী শ্রাবণী মামলার পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

দায়ের করা মামলার এজাহারে সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে ২০২১ সালের ৪ জুন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী লিখন সাকসেনার বিয়ে হয়।  বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় স্ত্রীর পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে প্রায়ই মারধর ও মানসিক নির্যাতন করত পরিবারের লোকজন। স্বামী ও পরিবারের লোকজনের অত্যাচার সহ্য করতে না পারায় বাড়ি থেকে দাবি করা যৌতুকের ১০ লাখ টাকার মধ্যে দুই লাখ টাকা তার স্বামীকে এনে দেন ভুক্তভোগী। পরবর্তীতে স্বামী লিখন সাকসেনা ৪০তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করতে চেষ্টা করেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল দুপুরে যৌতুকের টাকার জন্য অভিযুক্তরা বাদী ভুক্তভোগী স্ত্রীকে মারধর করে আহত করেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

মামলার বাদী বলেন, যৌতুকের টাকার জন্য লিখন বিভিন্ন সময়ে আমাকে নির্যাতন করত। পরে এক সময় আমাকে রেখে অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। পরবর্তীতে সে ৪০তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলে আমাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করতে চেষ্টা চালায়।

তিনি আরও জানান, সংসার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আমি নির্যাতন সহ্য করেও বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা এনে দিয়েছি। আমার সাথে যা হয়েছে আমি তার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ বিষয়ে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ মোর্শেদ বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলার আসামি লিখন সাকসেনাকে ভৈরবের ছাগাইয়া গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও তার দুই ভাইকেও ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, লিখনকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হলে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। শুক্রবার মামলার অপর আসামি হৃদয়কে আদালতে হাজির করা হলে তাকেও কারাগারে পাঠান আদালত।

এসকে রাসেল/এসকেডি