কালবৈশাখীর তাণ্ডবেই আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নওগাঁর অসংখ্য ফসলি জমির ধান। এবার সেই তাণ্ডব থেকে রক্ষা পায়নি আমও। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পরপর দুই রাতে জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে ঘর বাড়ি, গাছ-পালাসহ অপরিপক্ব আমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

শুক্রবার (২০ মে) রাত ২টার দিকে ব্যাপক ঝড় বৃষ্টি হয়। ঝড়-বাতাস স্থায়ী ছিল প্রায় এক ঘণ্টা। কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে আমের বাগান, কলা, শাক-সবজিসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত দুই দিনের ঝড়ের তাণ্ডবে জেলায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। জেলায় ৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমির কাঁচা আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ৫০ হেক্টর জমির কলা ও ৫০ হেক্টর জমির বিভিন্ন শাক-সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এর মধ্যে পত্নীতলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমি, সাপাহারে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর, পোরশায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর, ধামইরহাটে ৪৭৫ হেক্টর ও নিয়ামতপুরে ৪৮০ হেক্টর জমির কাঁচা আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আম বাগান মালিকদের দাবি, ল্যাংড়া, ফজলী, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের অন্তত ১৫-২০ ভাগ আম ঝরে গেছে। এদিকে ঝরে পরা আম অপরিপক্ব হাওয়ায় নাম মাত্র দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে।

এদিকে ঝরে পড়া আম নিয়ে জেলার সা-পাহার বাজারে কেনা-বেচার ধুম পড়েছে। ৪ থেকে ৫টি আড়তে ঝরে পড়া অপরিপক্ব আম ২-৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ দিন আড়তগুলোতে দুই থেকে তিন হাজার মণ আম কেনা হয়েছে বলে জানান আড়ৎ মালিকরা।

আম চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, গত দুই দিনের ঝড়ে ৭০ বিঘা জমির প্রায় ৩৫০ মণ ঝরে পড়ে গেছে। বর্তমানে বাগানে যে আম আছে এতে জমি ইজারা, সার ও কীটনাশকের খরচের টাকা উঠবে কি না এনিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

সাপাহার বাজার আম ব্যবসায়ী আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি কার্ত্তিক সাহা বলেন, গত দুই দিনের ঝড়ে আমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমার আড়তে এক দিনে প্রায় ৫০০ মণ ঝরে পড়া কাঁচা আম কিনেছি। ঝরে পড়া আমগুলো অপরিপক্ব। যা তরকারি এবং আচার তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে। এ আমের চাহিদা কম থাকায় দামও কম।

এ বিষয়ে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, শুক্রবার রাত আড়াইটা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নওগাঁয় ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার, আর বৃষ্টি হয়েছে ৪৩ মিলিমিটার।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ জানান, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার দুই রাতে জেলার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। শুক্রবার ঝড়ের সাথে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে আমের ক্ষতি বেশি হয়েছে। জেলায় ৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমির কাঁচা আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফজলী, ল্যাংড়া, নাক ফজলী, গোপালভোগ জাতের গাছগুলো বড় হওয়ায় কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে এসব গাছের আম বেশি ঝরে পড়েছে। এছাড়াও কলা ৫০ হেক্টর আর শাক-সবজি ৫০ হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কৃষি বিভাগের লোকজন মাঠে গিয়ে কাজ করছেন।

উল্লেখ্য, জেলায় এ বছর ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। ৫ হাজার ৮০০ আম চাষির প্রায় সাড়ে ৯ হাজার বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ দশমিক ৫ টন। সে হিসেবে এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৭ টন।

মো. দেলোয়ার হোসেন/এসকেডি