ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ নেওয়া কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নলকূপের অপারেটরের বিরুদ্ধে। প্রি-পেইড কার্ডের টাকা ছাড়াও ভাড়া বাবদ এ টাকা নেন অপারেটর আক্তারুজ্জামান আক্তারুল। এতে সেচ দিতে না পারায় কৃষকরা ফসল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

সদর উপজেলার ভূল্লী বড় বালিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ১০৮ নং গভীর নলকূপের আওতায় থাকা প্রায় ৫০ জন কৃষক সেচ নিতে গিয়ে এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন। এর প্রতিবাদে কৃষকরা অপারেটরের নামে লিখিত অভিযোগ করেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বড় বালিয়া ইউনিয়নে ১০৮ নং গভীর নলকূপের দায়িত্বে থাকা অপারেটর আক্তারুজ্জামান ১০ বছর ধরে ওই এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে আসছেন। প্রতিবছর সেচ মৌসুমে একরপ্রতি ২৪০০ টাকা ভাড়া দিতে হয় একজন কৃষককে। সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬০ একর জমি রয়েছে। বোরো বা আমন মৌসুমে এ টাকা দিতে না পারলে কৃষককে সেচসুবিধার বাইরে রাখেন তিনি।

চলতি বছর ওই এলাকার ৫০ জন কৃষক এমন ভোগান্তি শিকার হলে এ বিষয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর অভিযোগ করলে অপারেটর গভীর নলকূপে তালা মেরে দেন এবং অভিযোগকারী কৃষকদের পানি না দেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগে জানানো হয়।

ভুক্তভোগী ও অভিযোগকারী কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, আমরা কার্ডের মাধ্যমে টাকা দিয়ে ডিপটিউবওয়েল থেকে পানি নিই। কার্ডে টাকা দিয়ে আসছি আমি। অপারেটর আক্তারুজ্জামান নিজেকে ডিপটিউবওয়েলের মালিক দাবি করেন। তাই বিঘাপ্রতি ১২০০ (এক একর দুই বিঘা) টাকা না দিলে জমিতে তিনি সেচ দেবেন না। তিনি তালা মেরে রেখেছেন। সে জন্য আমরা সবাই মিলে বরেন্দ্র অফিসে একটি অভিযোগ করি। সেটা করতে গিয়ে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছের অপারেটর। আমরা এটির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।

প্রায় আড়াই একর জমির মালিক কৃষক বিপ্লব বলেন, ১০ বছর ধরে আমরা এই ডিপটিউবওয়েলের আওতায় সেচ নিয়ে আসছি। চাপে পড়ে আমরা টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। আমরা নিজস্ব কার্ডে টাকা ঢোকানোর পরও বিঘাপ্রতি ১২০০ টাকা করে অপারেটরকে ভাড়া দিই। আসলে তিনি কেন এই টাকা নেন বা নিয়ম আছে কি না, সেটা আমরা জানতে চাই।

ভুক্তভোগী কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, অপারেটরকে টাকা দিলে সে পানি দেবে, না দিলে দেবে না। এক মাস ধরে আমি পানি নিতে পারি নাই। কেন পানি দিবে না, এমনটা জানতে চাইলে উনি বলেন, এই ডিপটিউবলের মালিক উনি নিজেই। জোর করে পানি নিতে চাইলে মামলা করবে সবার নামে। পানি দিতে না পারায় আমাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটার আমরা দ্রুত সমাধান চাই।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আক্তারুজ্জামান বলেন, তারা যে অভিযোগ করেছে, তা মোটেও সত্য না। গভীর নলকূপ করতে গিয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে আমি কয়েক ধাপে টাকা দিয়েছি। সেই টাকা তোলার জন্য এবং আমি আমার খরচের জন্য আংশিক কিছু টাকা নিই কৃষকের কাছ থেকে। আমি বিঘাপ্রতি ৮০০ বা ১০০০ টাকা চাই। জোর করে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। তারা যা দেয়, তা-ই নেওয়া হয়। অনেকে আবার টাকা দেয় না।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের ঠাকুরগাঁও রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১০৮ নং গভীর নলকূপের অপারেটরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। টাকা নেওয়ার নিম নেই। এরপরও যদি ওই অপারেটর অনিয়ম করতে থাকে, তাহলে আমরা তাকে বাতিল করব।

এম এ সামাদ/এনএ