মধ্যবয়স্ক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের দুই পায়ে পচন ধরে পোকা বাসা বেঁধেছে। গন্ধ পেয়ে দুই-তিনটি কুকুর অপেক্ষা করছিল ক্ষতস্থান থেকে মাংস ছিঁড়ে নেওয়ার জন্য। কুকুরগুলো একবার এগোচ্ছে তো আবার পেছাচ্ছে।

অনেকেই দেখেছেন বিষয়টি। এমনকি দেখেছেন ওই হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। তবে শেষ রক্ষা হয়েছে নাট্যকর্মী জেসন পলাশের উদ্যোগে।

শনিবার (২১ মে) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই অসুস্থ যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে ভর্তি করা হয়। আজ রোববার (২২ মে) থেকে পুরোদমে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। বরিশাল সদর হাসপাতালের সামনে এর আগে এভাবে কয়েক দিন ধরে পড়ে ছিলেন যুবক।

এ বিষয়ে নাট্যকর্মী জেসন পলাশ বলেন, শনিবার সকালে ওই যুবককে হাসপাতালের গেটে শুয়ে থাকতে দেখি। তার দুই পা পচে গেছে। অদূরে কুকুর অপেক্ষায় ছিল পচা মাংস খাওয়ার জন্য। সারা দিনেও কেউ ওই যুবককে নিতে না আসায় বিকেলে সদর সমাজসেবা কার্যালয়কে অবহিত করি।

সেখান থেকে অনুরোধ করা হয়, যেন আমরা যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করাই। কিন্তু পরিচয় জানতে না পারায় আমরা সরকারি সেবার সহায়তা নিই। একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক নাঈম তালুকদার তাকে উদ্ধারে সহায়তার জন্য ৯৯৯ নম্বরে কল করেন। শেষে কোতোয়ালি মডেল থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা এলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ধারাবাহিক নাটক যমজ-এর নিয়মিত অভিনেতা জেসন পলাশ জানান, যুবকের দুই পায়ে পোকা হয়ে গিয়েছিল। তা ছাড়া অনেক দড়ি, ময়লা-আবর্জনা জড়ানো ছিল। বেঁধে রাখা দড়ি হাড়ে আটকে গেছে। এগুলো সব পরিষ্কার করে দুই পায়ে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।

খবর পেয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন ওই যুবককে দেখতে এসেছিলেন। তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আশ্বস্ত করেছেন, অসহায় ওই যুবকের চিকিৎসার সব ব্যয়ভার তিনি বহন করবেন বলে জানান জেসন পলাশ।

উদ্ধারকর্মী আলামিন সাগর বলেন, ওই যুবক স্পষ্ট করে কথাও বলতে পারেন না। মুখে কথা আটকে যায়। এ জন্য নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তার দুই পায়ের অবস্থা খুবই খারাপ। যে কয়জনে উদ্ধার করেছেন, তারা সার্বক্ষণিক তার পাশে থাকছেন।

কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাকিব বলেন, স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অসহায় অসুস্থ ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে হয়তো স্পষ্ট কথা বলতে পারবেন। তখন পরিচয় জানা যাবে। তবে আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি তার স্বজনদের সন্ধানের।

বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, রোগীর শরীরে পচনের মাত্রা মারাত্মক। চিকিৎসা শুরু হয়েছে। কিছুদিন গেলে বলা যাবে রোগটি নিরাময়যোগ্য কি না। প্রাথমিকভাবে ধরা পড়েছে তিনি গ্যাংরিনে আক্রান্ত। রক্তনালি চিকন হয়ে এই রোগের সংক্রমণ হয়। আমাদের এখানে যতটুকু সম্ভব সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ