পাবনার বেড়া উপজেলার কাজিরহাট-আরিচা নৌপথে ফেরি সংকট কাটছেই না। নামে মাত্র তিনটি ফেরি থাকলেও মাঝে মধ্যেই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। বর্তমানে তিনটি ফেরির মধ্যে একটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় দুটি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দুপুরে দুই পাড়ে পারাপারের অপেক্ষায় তিন শতাধিক যানবাহন দেখা গেছে। আড়াই কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছরের শুরুতে উদ্বোধনের সময় চারটি ফেরি দেওয়া হলেও পরবর্তীতে যানবাহনের চাপ থাকায় কর্তৃপক্ষ আরও একটি ফেরিসহ পাঁচটি ফেরি ঘাটে সংযুক্ত করে। এরপর যানবাহনের সংকট দেখিয়ে এখান থেকে দুটি ফেরি নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে ঘাটে তিনটি ফেরি থাকলেও একটিও মানসম্পন্ন ফেরি নয়। যার জন্য আমরা চরম বেকায়দায় আছি। এতো বড় রুটে মাত্র দুটি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার সম্ভব নয়। এ অবস্থায় জরুরি পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছি।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (২১ মে) ডাম্প ফেরি কপোতি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তিন দিন আরিচা ঘাটে রেখে মেরামত করে করে বুধবার (২৫ মে) বিকেলে কাজিরহাট ঘাটে আনা হয়। গতকাল বুধবার বিকেল থেকে ছয় ঘণ্টা চলার পরে আজ সকালে যমুনা নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ফেরিটিতে পুনরায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এ কারণে ফেরিটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

অপরদিকে গত রোববার (২২ মে) সকালে যমুনা নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে পন্টুন ডুবে যাওয়ায় রো-রো-ফেরি রোকেয়া বন্ধ রাখা হয়। এরপর তিন দিন মাত্র একটি ফেরি দিয়ে চলে এই রুট। এরপর গত মঙ্গলবার সকালে কর্মকর্তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বেগম সুফিয়া কামাল নামের একটি রো রো ফেরি দেওয়া হয়। বর্তমানে ফেরি সুফিয়া কামাল ও ফেরি কদম চলাচল করছে।

তবে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রো রো ফেরির পন্টুন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। সেটি স্থাপন করা হয়ে গেলে দুটি রো রো ফেরি এই ঘাটে নিয়ে আসা হবে। 

দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, কাজিরহাট ট্রাক টার্মিনাল থেকে শুরু করে কাশিনাথপুর কাজিরহাট সড়কের প্রায় আড়াই কিলোমিটারজুড়ে দুই শতাধিক ও আরিচাঘাটে শতাধিক ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন নদী পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী ছোট গাড়িগুলোকে ফেরিতে ওঠার সুযোগ দেওয়ায় কোনো কোনো পণ্যবাহী ট্রাককে আরিচায় যাওয়ার জন্য দুই থেকে তিন দিন ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ ছাড়াও পেঁয়াজ, রসুন, ধান, সবজিসহ জরুরি পণ্যবাহী  ট্রাকগুলোকে ঘাট কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।

এ সময় কথা হয় লালমনিরহাট, চাপাইনবাবগঞ্জ, মেহেরপুর থেকে আসা আব্দুর রহমান ও কবুল হোসেন, হোসেন প্রামানিকসহ চার-পাঁচজনের সঙ্গে। এ সময় তারা অভিযোগ করে জানান, ৭২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে ফেরিঘাটে অবস্থান করছেন। তিন দিন আগে যখন ঘাটে আসছেন তখন বেশি যানজট বা যানবাহন ছিল না। যান্ত্রিক ত্রুটি থাকা একটি ফেরি মেরামত করে ঘাটে আনা হয়। এরপর একটি রো রো ফেরি অন্য ঘাট থেকে আনা হলে ঘাট স্বাভাবিক হওয়ার দিকে ছিল। কিন্তু আজ সকালে আরেকটি ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ভোগান্তি শেষ হয়নি।

বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানজট থাকার কারণে এই নৌপথের জনপ্রিয়তা বাড়লেও মাত্র তিনটি ‘লক্কড়-ঝক্কড়’ ফেরিতে যানবাহন পারাপার চলছে। এগুলো প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হয়েও পড়ছে। এর মধ্যে যাত্রীবাহী গাড়িগুলো ফেরিতে ওঠায় অগ্রাধিকার পাওয়ায় প্রতিটি ফেরিতে মাত্র তিন-চারটি ট্রাক ওঠার সুযোগ পাচ্ছে।

ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, এই রুটটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও সেই তুলনায় ঘাটে মানসম্মত কোনো ফেরি দেওয়া হয়নি। যার জন্য মাসের মধ্যে অধিকাংশ সময়ই ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। মেরামত করে ঘাটে আনতে আনতেই যানবাহনের জটলা তৈরি হয়। এই ঘাটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বিআইডব্লিউটিসিকে জানিয়েছি। পন্টুন স্থাপনের কাজ শেষ হলে তারা আমাদের ঘাটে দুটি রো রো ফেরি সংযুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন। 

তিনি আরও জানান, বর্তমান ফেরি দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০টি পরিবহন পার করতে পারছেন। তবে প্রতিদিন যে পরিমাণ পরিবহন এ ঘাটে আসছে, তাতে জরুরিভাবে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো না হলে এ বিড়ম্বনা কাটানো সম্ভব হবে না। এখানে ফেরিঘাট হয়ে সুবিধার পরিবর্তে মানুষের কষ্ট আরও বাড়ছে।

রাকিব হাসনাত/আরএআর