নির্ধারিত সময়ের পৌনে দুই ঘণ্টা দেরিতে স্টেশন ত্যাগ করেছিল দুর্ঘটনার কবলে পড়া যমুনা লাইন বাসটি। বাসের চালক ছিলেন অনভিজ্ঞ। ফলে শুরু থেকেই বেপরোয়া গতি ছিল বাসটিতে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যাত্রীরা সোমবার (৩০ মে) দুপুরে ঢাকা পোস্টকে এসব কথাই বলেছেন। তাদের দাবি সড়কে মনিটরিং জোরদার না করা হলে এমন প্রাণহানি ঘটতেই থাকবে।

ওদিকে বাসের চালক নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। বাসটি যিনি চালিয়ে আসছিলেন তিনি জীবিত নাকি মৃত সেটিও নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

বাস কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার বিষয়ে কোনো যোগাযোগ করেনি উল্লেখ করে গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ বেলাল হোসেন বলেন, গাড়ির সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশন সনদ, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স সবকিছুই গাড়িতে থাকার কথা। দুর্ঘটনার পরে আমরা পুরো বাস তল্লাশি চালিয়ে ওসব কাগজ পাইনি। গাড়ি ও চালকের লাাইসেন্স ছিল কি না এখনি বলা না গেলেও গাড়িটি বেপরোয়া গতির ছিল।

এই কর্মকর্তা বলেন, চালকের সন্ধান পেতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। তিনি বেঁচে আছেন এমন তথ্য জানতে পেরেছি।

মঠবাড়িয়া থানার রাজারহাট গ্রামের বাসিন্দা আহত যাত্রী লিটন হাওলাদার বলেন, গাবতলী থেকে ৯টায় ছেড়ে এসে নবীনগরে রাত ১০টায় আসে। সেখানে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও গাড়ি ঠিক হচ্ছিল না। এ নিয়ে যাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। গাড়িতে ৩/৪ জন লোক ছিলেন যারা যাত্রীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণও করেন। শেষে সব যাত্রী মিলে ঠেলে গাড়িটির ইঞ্জিন চালু করি। 

ইঞ্জিন চালুর পর বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে পুরো পথের কোনো স্থানে আর ইঞ্জিন বন্ধ করেননি চালক। লিটন বলেন, চালকের সঙ্গে আমাদের তর্কাতর্কিও হয়েছে। তার বয়স সর্বোচ্চ হলে ২৫ বছর হবে। গাড়ি চালু করার পর থেকেই বেপরোয়া গতিতে চালিয়েছে। আমরা বারবার তাকে নিষেধ করেছি। কিন্তু গাাড়ির স্টাফরা কোনো কথা শোনেননি।

আরেক যাত্রী বিডিআরের সাবেক সদস্য ভান্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া গ্রামের জলিল মৃধা বলেন, রাত ১০টায় নবীনগর স্টেশন ত্যাগ করার কথা। কিন্তু সেখান থেকেই বাসটি ছাড়ে রাত পৌনে ১২টায়। যেহেতু তিনি দেরি করে ছেড়েছেন এ জন্য একেবারে বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন। যাত্রীরা নিষেধ করায় এক ব্যক্তি নিজেকে সাব কন্ট্রাকটর পরিচয় দিয়ে আমাদের শাসিয়ে যান।

জলিল বলেন, গাড়ির চালকের বয়স ২৫ বছরের বেশি হবে না। গাড়ি চালানোর জন্য একেবারে অপ্রাপ্ত। তাছাড়া গাড়িটি কোথাও কেউ চেকে করেনি। সড়কে যদি গাড়ি চেকের ব্যবস্থা না হয় তাহলে এমন প্রাণহানি ঘটতেই থাকবে। দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার এক ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস সেখানে এসে আমাদের উদ্ধার কাজ শুরু করে।

আরেক আহত যাত্রী মিল্টন বলেন, বাস স্টাফরা কারও কথা শোনেননি। যেহেতু গাড়িটি দেরিতে ছেড়েছে এ জন্য এত বেশি গতিতে চালিয়েছে তাতে সবাই আমরা আতঙ্কিত ছিলাম। তার ওপরে টেকেরহাট এসে রাত সোয়া ৩টার দিকে যাত্রী তোলার জন্য ৪০ মিনিট অপেক্ষা করে। সেখান থেকে কম করে হলেও ২০ জনের মত যাত্রী তুলেছে।

এই যাত্রী বলেন, বেপরোয়া গাড়ির বিরুদ্ধে পুলিশ ও বিআরটিএর কার্যত নজরদারি না থাকলে পদ্মা সেতু চালুর পরে শত শত মায়ের বুক খালি করে দিবে এসব পরিবহন।

প্রসঙ্গত, রোববার (২৯ মে) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার বামরাইলে যমুনা লাইন নামে একটি গাড়ি সড়কের পাশের রেইনট্রি গাছে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুসরে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ৮ জনের মৃত্যু হয়। অসুস্থ অবস্থায় একজন উজিররপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং আরেকজন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। 

এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় এবং নিহতদের দাফনে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে। পুলিশ বাদী হয়ে বাস চালকের বিরুদ্ধে হাইওয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরআই