কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানা এক প্রসূতি নারীর জন্য রক্ত দিচ্ছেন

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন এক প্রসূতি নারীকে রক্ত দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানা। বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১২টার দিকে ইউএনও ওই হাসপাতালে ছুটে গিয়ে প্রসূতি নারীকে নিজের রক্তদান করেন।

জানা গেছে, কাঁচা বেগম (২০) নামে অসহায় এক প্রসূতি নারীর হঠাৎ করে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে হাসপাতালের চিকিৎসকরা ওই নারীর পরিবারের সদস্যদের জরুরি ভিত্তিতে এ পজেটিভ রক্ত দিতে বলেন। এ অবস্থায় ওই প্রসূতি নারীর স্বামী রক্ত খুঁজতে শুরু করেন। কিন্তু সারাদিনেও তিনি রক্তের ব্যবস্থা করতে পারেননি।

এ সময় তিনি স্থানীয় কলমাকান্দা ব্লাড ডোনেশন সোসাইটি নামে রক্তদানকারী সংগঠনের সদস্য সজীব মিয়ার সঙ্গে  যোগাযোগ করেন। পরে সজীবের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল রানা। বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১২টার দিকে ইউএনও ওই হাসপাতালে ছুটে গিয়ে প্রসূতি নারীকে নিজের রক্তদান করেন।

ইউএনও রক্ত দেওয়ার পর ওই প্রসূতি নারী শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানান কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আল মামুন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা নাহিদ মিয়ার স্ত্রী কাঁচা বেগম মাসখানেক আগেই সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন। এরপর সন্তান নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পর পরই তার রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। পরে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে আসছিলেন। এরই মধ্যে বুধবার তার রক্তশূন্যতা তীব্র হলে চিকিৎসকরা পরিবারের লোকজনকে জরুরি ভিত্তিতে রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন।

কলমাকান্দা ব্লাড সোসাইটির সদস্য সজীব মিয়া বলেন, হতদরিদ্র ওই প্রসূতি নারীর জন্য এ পজেটিভ রক্ত তার স্বামী খুঁজছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে আমরা কলমাকান্দা ব্লাড ডোনেশন সোসাইটির পক্ষ থেকে সারাদিন চেষ্টা করেও এ পজেটিভ রক্ত সংগ্রহ করতে পারিনি। আমাদের ইউএনও স্যারের রক্তের গ্রুপও এ পজেটিভ। বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানানোর পর পরই তিনি মধ্যরাতেই হাসপাতালে ছুটে যান এবং ওই প্রসূতি নারীকে রক্তদান করেন।

প্রসূতি কাঁচা বেগমের স্বামী নাহিদ মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি ইউএনওর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। কোথাও যখন রক্ত পাচ্ছিলাম না এমন সময় আল্লাহর রহমত স্বরূপ ইউএনও স্যার হাসপাতালে ছুটে আসেন। নিজের রক্ত দিয়ে আমার স্ত্রীর জীবন বাঁচিয়েছেন।

এ বিষয়ে কথা হলে ইউএনও মো.সোহেল রানা সাংবাদিকদের বলেন, বিপদের সময় একজন অসহায় নারীকে নিজের রক্ত দিতে পেরে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছি। অসহায় মানুষের সেবা করা এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোই আমার দায়িত্ব।

জিয়াউর রহমান/এসপি