হাজিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

লক্ষ্মীপুরে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের কারণে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো হাজিরপাড়া হামিদিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও হাজিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত ছুটি দেওয়া হলেও প্রাথমিকে দেওয়া হয়নি। তবে শিশুরাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেনি।

বুধবার (১ জুন) সকাল ১০টায় শুরু হওয়া সম্মেলনের মঞ্চে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলিসহ অনেকে উপস্থিত হয়েছেন।

হাজিরপাড়া হামিদিয়া উচ্চবিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মাওলানা নুরুল ইসলাম বলেন, মাঠে সম্মেলনের কারণে সংরক্ষিত ছুটি দেওয়া হয়েছে। মাইকের শব্দ ও বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে পাঠদান সম্ভব হতো না। বিদ্যালয়ে সকাল থেকেই তিনি উপস্থিত রয়েছেন বলে জানান।

হাজিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, আমরা স্কুল বন্ধ করিনি। সব শিক্ষক উপস্থিত রয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসেনি।

কয়েকজন অভিভাবক জানান, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এখনো নানা কারণে অনিয়মিতভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। বিদ্যালয় বন্ধ রেখে একের পর এক রাজনৈতিক সভা-সম্মেলন শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। সাপ্তাহিক ও অন্য ছুটির দিন এসব কার্যক্রম পরিচালনা করার আহ্বান জানান তারা।

হাজিরপাড়া হামিদিয়া উচ্চবিদ্যালয়

বুধবার (১ জুন) সরেজমিনে দুটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলতে দেখা যায়। প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে নেতা-কর্মীদের অবস্থান ছিল। এ নিয়ে জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক নিলুফা ইয়াসমিন। তবে তাকে প্রশ্ন করা নিয়ে গণিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদের সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

আবদুল কাদের জানান, স্কুল বন্ধের বিষয়ে সাংবাদিক প্রশ্ন করার কে? এ সময় এখানে তার উপস্থিতি কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সম্মেলন দেখতে এসেছি। একসময় আমিও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। এখন রাজনীতি না করলেও দলের প্রতি টান রয়েছে।

বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দুটি প্রতিষ্ঠানে মাঠে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে সপ্তাহব্যাপী প্যান্ডেলসহ রাজসিক আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে পড়ালেখায় পাঠদানে সমস্যায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। এ সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে ২৯ মে শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে মান্দারী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের হলরুমে কাউন্সিলরদের নিয়ে সভা করেছেন দলটির নেতারা। এ জন্য দুই ক্লাস শেষে শিক্ষকরা বিদ্যালয় ছুটি দেন।

হাজিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে তালা, আরেকটি কক্ষে চলছে নেতা-কর্মীদের মিটিং

সম্মেলনের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম চৌধুরী জানান, অনুমতি নিয়েই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর সমাগমের জন্য খোলা স্থান আর কোথাও ছিল না।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুল মতিন বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহার করার জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিদ্যালয় বন্ধ রাখার বিষয়টিও আমাকে জানানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এনএ