বরিশালে সজীব সরদার নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (০১ জুন) রাতে আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নে অভিযান চালায় র‌্যাব-৮ এর একটি দল। 

জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের গৈলা বাজার সংলগ্ন প্রভাতী ভবনে মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে সজীব সরদার নামে একজনকে আটক করে র‌্যাব-৮ এর একটি দল। র‌্যাব দাবি করেছে, আটক যুবকের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ৩৯০ পিস ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটারগান, শুটারগানের দুটি কার্তুজ জব্দ করা হয়েছে। এরপর তার বিরুদ্ধে র‌্যাবের ডিএডি আনসার আলী বাদী হয়ে অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক দুটি মামলা দিয়ে থানায় সোপর্দ করেন।

তবে সজীব সরদারের মা নাসরিন জাহান বলেন, র‌্যাব যখন আমার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়, তখন আমরা ভেবেছি ঈদের আগের একটি মারামারির ঘটনায় হয়তো তাকে আটক করতে পারে। র‌্যাব বলে যায়, সকাল ৮টায় আগৈলঝাড়া থানায় যোগাযোগ করতে। কিন্তু সারা দিন অপেক্ষা করার পর সন্ধ্যায় থানায় নিয়ে আসে। যখন সজীবকে থানায় নিয়ে আসা হয়, তখন তার জ্ঞান ছিল না। 

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের কোনো দিন শ্বাসকষ্ট ছিল না। অথচ থানায় তাকে ইনহেলার দিয়ে শ্বাস নিতে হয়েছে। দুই হাঁটু থেকে রক্ত ঝরছিল। বিভিন্ন স্থানের চামড়া তুলে ফেলেছে। কনুই দুুটি ফুলে গেছে। থানায় চারবার বমি করেছে। আমার ছেলের শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে নির্যাতন চালায়নি র‌্যাব।

নাসরিন বেগম আরও বলেন, আপনারা দেখেছেন আমার পুত্রবধূ বরিশাল আদালত চত্বরে পবিত্র কুরআন শরীফ নিয়ে গিয়েছিল। সে বলেছে, যে বিছানার চাদরের নিচ থেকে অস্ত্র, মাদক উদ্ধার দেখিয়েছে, তা আমার পুত্রবধূ প্রতিদিন পরিষ্কার করে। তাহলে ঘরে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা এল কোথা থেকে? সম্পূূর্ণভাবে চক্রান্ত করে, ষড়যন্ত্র করে আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে।  

সজীব সরদারের স্ত্রী সৈয়দা নওরিন জাহান মৌ বলেন, রাতে বেশ কয়েকজন র‌্যাব সদস্য এসে আমার ঘরের দরজা খুলতে বলেন। আমি পরিচয় পাওয়ার পরে দরজা  খুলে দেই। তারা ঘরে ঢুকেই আমাকে বলেন, কোনো শব্দ করলে আমার দুই সন্তানের ক্ষতি করে ফেলবেন। আমার স্বামী পাশেই ছিলেন। র‌্যাব সদস্যরা ঘরে ঢুকে আমাদের আরেকটি রুমে তল্লাশি চালান। সেখানে তারা কিছুই পাননি। অথচ আমার স্বাামীকে নিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, অস্ত্র পেয়েছে তারা। আমি কিছু বলতে গেলে সন্তানদের ক্ষতি করার হুমকি দেন।

তিনি আরও বলেন, তারা আমার স্বামীকে সুস্থ নিয়ে এসেছেন। কিন্তু থানায় হস্তান্তর করেছেন নির্মম নির্যাতনের পর। আমার কথা হলো, যদি আমার স্বাামী অপরাধী হন, তাহলে তার বিচার করবেন আদালত। আদালত আমার স্বামীর যা বিচার করবে, সেটাই মেনে নেব। কিন্তুু ধরে নিয়ে গিয়ে আমার স্বামীকে নির্মম নির্যাতন চালাল র‌্যাব কোন আইনে? আমার স্বামীর চিকিৎসাও করাতে পারছি না।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টায় জানতে পারি সজীবকে শোয়ানো অবস্থায় থানায় নেওয়া হয়েছে। হাঁটতে পারছে না। পুরো শরীরে মারধরের দাগ। তাকে র‌্যাব সদস্যরা কোন আইনে নির্যাতন করল বুঝতে পারছি না। আমার স্বামী সজীব ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন। সে সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছেলে আশিক আব্দুল্লাহর সঙ্গে রাজনীতি করে।

এ বিষয়ে র‌্যাব ৮ এর সিপিসি-১ এর কমান্ডার মেজর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা যে অবস্থায় আসামি গ্রেপ্তার করেছি, সেই অবস্থাতেই আগৈলঝাড়া থানায় সোপর্দ করছি।

আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ছরোয়ার বলেন, তার বিরুদ্ধে ৫/৬টি মামলা চলমান রয়েছে। তাকে আটক করতে গেলে কিছুটা ধস্তাধস্তি হয়ে আহত হতে পারেন। যেহেতু সে স্পর্শকাতর আসামি, তাই থানার নিরাপত্তার খাতিরে স্বজনদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি। আর স্বজনরা থানায় দেখা করতে পারবেন এমন কোনো  বিধানও নেই। এখানে একজন আইনজীবীকে দেখা করতে দেওয়া হবে। তবে থানায় তাকে কোনো ধরনের মারধর করা হয়নি। 

এদিকে বুধবার (০১ জুন) সন্ধ্যায় সজীব সরদারকে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক মো. মনিরুজ্জামান তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সজীবকে বহনকারী পুলিশের পিকআপটিকে বাধা দেয় তার স্বজনরা। এ সময়ে তারা সড়কে শুয়ে পড়েন। 

অন্যদিকে উজিররপুর থানার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, দুই পুলিশ সদস্যের কাঁধে ভর দিয়ে অসুস্থ অবস্থায় গাড়িতে তোলা হচ্ছে সজীবকে।

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে এক আসামির স্বজনরা তাকে জেলহাজতে পাঠানোর সময় পুলিশের ভ্যান আটকে দিচ্ছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি