ভরা মৌসুমেও ধানের সংকট কাটছে না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের ধানের হাটে। আর এ সংকটের কারণে বেড়েই চলেছে ধানের দাম। বিশেষ করে গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই ধানের দরে ঊর্ধ্বগতি। প্রত্যেক জাতের ধানে মণ প্রতি ২৫০-৩০০ টাকা বেড়েছে। এতে করে প্রভাব পড়ছে চালের বাজারেও। সম্প্রতি সব ধরনের চালে বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) পাইকারি দাম ১৫০-২০০ টাকা বেড়েছে।

ধান ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে হাওর এলাকাগুলোতে হওয়া কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও অকাল বন্যায় অনেক ধান নষ্ট হয়েছে। এতে করে ধানের সংকট তৈরি হয়েছে। আর প্রতিদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চালকলগুলোতে যে পরিমাণ ধান প্রয়োজন, এখন তার অর্ধেকও মিলছে না হাটে।

হাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর ভিওসি ঘাটে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে বসা এই হাটটি পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের হাট। এটিকে ধানের মোকামও বলা হয়ে থাকে। এই মোকামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের হাওর এলাকার উৎপাদিত ধান কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নৌকায় করে নিয়ে আসেন বেপারীরা। এসব ধান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চালকলগুলোতে যায়। এখানকার চালকলগুলো থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে চাল সরবরাহ করা হয়।

ধানের মৌসুমে হাটে প্রতিদিন ১ থেকে দেড় লাখ মণ ধান বেচাকেনা হয়। আর বাকি সময়গুলোতে দিনে বিক্রি হয় ৩০-৪০ হাজার মণ ধান। মৌসুমের সময় প্রতিদিন ধানবোঝাই শতাধিক নৌকা এসে ভিড়ে ভিওসি ঘাটে। কিন্তু এখন মৌসুম সত্ত্বেও ধানের আমদানি কম।

বর্তমানে চাহিদার তুলনায় হাটে ধান আমদানি কম থাকায় প্রতিদিন ২৫-৩০ হাজার মণ ধান বেচাকেনা হচ্ছে। যদিও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আড়াইশরও বেশি চালকলে প্রতিদিন ধানের চাহিদা আছে অন্তত ১ লাখ মণেরও বেশি।
হাটে এখন বিআর-২৮ জাতের ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১১৫০-১২০০ টাকা, বিআর-২৯ ধান ১০৮০-১১০০ টাকা এবং মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৫০-১০০০ টাকা মণ দরে।

তবে গত মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেও প্রতি মণ বিআর-২৮ ধান বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকায়, বিআর-২৯ প্রতি মণ ৭৫০-৮০০ টাকায় এবং মোটা ধান বিক্রি হয়েছে ৬৮০-৭০০ টাকা মণ। সংকটের কারণে প্রতিদিনই ধানের দাম বাড়ছে।

এদিকে ধানের দাম বাড়তে থাকায় চালের দরও বেড়েছে। ১৫০-২০০ টাকা বেড়ে বিআর-২৮ জাতের চাল প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) এখন পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৫০০-২৬০০ টাকা, বিআর-২৯ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২৪০০-২৪৫০ টাকা এবং মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ২০০০ টাকা বস্তা। ধানের বাজার যদি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে চালের দরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের ধান বেপারী মো. তাহের জানান, তিনি হাওর এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে এনে আশুগঞ্জ মোকামে বিক্রি করেন। বন্যায় কৃষকদের ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। এর ফলে চাহিদামতো ধান পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্য ধানের দর বেড়েছে। কৃষকদের কাছ থেকেই বেশি দরে ধান কিনে আনতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আশুগঞ্জের চাল ব্যবসায়ী মো. কামাল মিয়া জানান, ধানের দাম বাড়ায় কম দরে চাল বিক্রি করা যাচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় হাটে ধানের আমদানি কম। এতে করে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে ধানের দাম। যদিও ধানের মৌসুমে দাম তুলনামূলক কম থাকে। যদি ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে, তাহলে চালও কম দরে বিক্রি করা যাবে বলে জানান তিনি।

চালকল মালিকরা বলছেন, হাওর এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। হাটে মানসম্পন্ন ধান আসছে কম। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আসন্ন আমন মৌসুম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

জানতে চাইলে আশুগঞ্জ অটোরাইসমিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল করিম খান সাজু বলেন, ‘শুধুমাত্র আমাদের অটোরাইসমিলগুলোতেই প্রতিদিন অন্তত ১ লাখ মণ ধানের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমরা হাটে সেই পরিমাণ ধান পাচ্ছি না। স্বাভাবিকভাবেই ধানের সংকট এবং দাম বাড়ার কারণে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। এখন যদি আমনের ফলন ভালো হয়, তাহলে ধানের সংকট কাটবে এবং চালের বাজার স্থিতিশীল হবে।’

আজিজুল সঞ্চয়/এসপি