বাবুল মিয়ার বয়স তখন চার কি পাঁচ বছর। হঠাৎ এক দিন তিনি হারিয়ে যান। আজ তার স্ত্রী-সন্তান আছে, তবে নেই জন্মদাতা মা-বাবা। সম্পত্তির জন্য নয়, একটু পরিচয়ের জন্য ফিরতে চান শিকড়ে। মা-বাবার কবরটাকে দেখতে চান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাওয়া বাবুল মিয়া (৫৬)। 

বাবুল মিয়া বলেন, যতদূর মনে আছে আমার বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে। বাবার নাম তোফায়েল আহমেদ। আমার এক ভাই ও দুই বোন ছিল। বোনদের নাম তাঁরা বানু ও তাসলিমা। বসুরহাট বাজার থেকে আমাদের বাড়ি ছিল দেড় কিলোমিটার দূরে। বাড়ির সামনে একটা খাল ছিল। তখন সাঁকো দিয়ে সেই খাল পার হতে হতো। খালের পাশেই ছিল বিদ্যালয়। 

শনিবার (০৪ জুন) রাতে আরজে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানার’ ১৯৯ নম্বর পর্বে বাবুল মিয়ার হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে একটি অনুষ্ঠান প্রকাশিত হয়।

অনুষ্ঠানে বাবুল মিয়া বলেন, আমার বাবা তোফায়েল আহমেদ দুই বিয়ে করেছিলেন। সৎ ভাইদের নাম ছিল তাজউদ্দিন ও মাইন উদ্দিন। দাদা সারেং ছিল। এ কারণে বাড়ির নাম ছিল সারেং বাড়ি। বাড়ির পাশে দাদার কবরস্থান ছিল। 

বাবুল মিয়া আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে কীভাবে সিলেট গিয়েছিলাম জানি না। সে সময় ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেছি। নিজের পরার মতো কানো পোশাক ছিল না। এখন স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার। তবে বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাবুল মিয়ার শেষ ইচ্ছা মৃত্যুর আগে পরিবারের কাউকে দেখে যেতে চান। বাবা-মায়ের কথা মনে পড়লেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বাসিন্দা মেহরাব মাহবুব নিলয় ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনুষ্ঠানের বর্ণনা অনুযায়ী বাবুল মিয়ার বাড়ি কোম্পানীগঞ্জের ৪ নং চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে। তার বোন তাসলিমা, মা খুখসুদা ও খালা খাদিজা মারা গেছেন।

কোম্পানীগঞ্জের আরেক বাসিন্দা মো. আবদুল হামিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বাবুল মিয়া সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি। তার দেওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ বক্তব্য মিলে গেছে। আমরা তার পরিবারকে আপন ঠিকানায় পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছি। 

হাসিব আল আমিন/এসপি