অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন করে বাড়তি আয় করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের পকম্বা গ্রামের ৬০ পরিবার। এতে তাদের কোনো ধরনের টাকা খরচ করতে হচ্ছে না। ফলে বিনা ব্যয়ে কেঁচো সার উৎপাদন করে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পেরে খুশি এলাকাবাসী। 

সরেজমিনে দেখা যায়, পকম্বা গ্রামে প্রায় সব বাড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন করা হচ্ছে। কেউ একটি রিং আকারের স্লাবে, কেউ দুটি আবার কেউ একাধিক স্লাবে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। আর এ কাজে পুরুষের চেয়ে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। 

কেঁচো চাষি আলেয়া বেগম বলেন, দুই বছর আগে আমাদের কৃষি অফিসে ডাকা হয়েছিল। সেখানে আমাদের কেঁচো সার কিভাবে উৎপাদন করতে হয় তার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপর আমাদের কেঁচো সার দেওয়া হয়। পরে আমরা বাড়িতে উৎপাদন করছি। নিজের জমিতে দেওয়ার পাশাপাশি এখন বিক্রি করছি। এতে সংসারে বাড়তি কিছু টাকা আসছে। 

আরেক চাষি আরতী বালা বলেন, আমাদের গ্রামের সবার বাড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন করা হয়। আমরা কেঁচো সার চাষ করে অনেক লাভবান হচ্ছি। প্রতি কেজি সার দশ টাকা দরে বিক্রি করছি। এক রিং স্লাবে দুইশ কেজির মতো সার উৎপাদন করা যায়। এটি উৎপাদনে সময় লাগে ২০-২৫ দিন। কিছুদিন আগে সার বিক্রি করে ছেলে-মেয়ের পরীক্ষার ফি দিয়েছি। আমরা রাণীশংকৈল কৃষি অফিসের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। 

স্থানীয় সাহিরুল ইসলাম বলেন, এটি রাণীশংকৈল কৃষি অফিসের একটি দারুণ উদ্যোগ। এলাকার অনেক মানুষ কেঁচো সার উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। তারা নিজের আবাদি জমিতে ব্যবহার করছেন। এতে জমির উর্বরতা বাড়ছে। ফলনও তুলনামূলক বেশি পাওয়া যাচ্ছে। 

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, লেহেম্বা ইউনিয়নের পকম্বা গ্রামের দুটি গ্রুপের ৬০ জন সদস্য রয়েছেন। যাদের আমরা কৃষি অফিসে নিয়ে গিয়ে কেঁচো সার উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দেয়। সেইসঙ্গে আমরা তাদের কেঁচো প্রদান করি। সার উৎপাদন করে তারা নিজের জমির উর্বরতার বৃদ্ধি করতে পারছেন। পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এখন তাদের দেখে অনেকেই কেঁচো সার উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এখানে কেঁচো সার কেনার জন্য আসছেন। গ্রামটাকে সবাই এখন কেঁচো পল্লী হিসেবে চেনেন। 

রাণীশংকৈল  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, লেহেম্বা ইউনিয়নের পকম্বা গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার কেঁচো সার উৎপাদন করে নিজের চাহিদা পূরণ করছেন। পাশাপাশি সার বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন। আমরা রংপুর বিভাগ গ্রামীণ প্রকল্প উন্নয়নের আওতায় তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখন তারা কেঁচো সার উৎপাদন করে পরিবারে সচ্ছলতা নিয়ে আসছে।

এম এ সামাদ/এসপি