না.গঞ্জে কাউন্সিলরকে পাচ্ছে না পাঁচ মাস, সুবিধাবঞ্চিত ওয়ার্ডবাসী
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলায় হাইকোর্টের জামিন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে অংশ নেন ১৩ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও সাবেক মহানগর যুবদল নেতা খোরশেদ আলম খন্দকার। সব প্রতিদ্বন্দ্বীর জামানত বাজেয়াপ্ত করে বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি।
তবে নির্বাচনের পর প্রায় পাঁচ মাস তিনি কাউন্সিলর কার্যালয়ে অফিস বসেননি। তার অবর্তমানে তার সচিব ওয়ার্ডভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও নাগরিক নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ওয়ার্ডবাসী। এদিকে আগাম জামিনের মেয়াদ গত ১৪ জানুয়ারি শেষ হলেও আদালতে হাজির না হয়ে তিনি আত্মগোপনে চলে যান বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৬ জুন) বেলা ১০টায় মাসদাইর তালা ফ্যাক্টরি এলাকায় তার নিজ বাসভসনে অবস্থিত ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে সরেজমিনে গেলে সেখানে তার দেখা মেলেনি। এ সময় তাকে বাড়িতেও পাওয়া যায়নি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়ার্ডের দুই বাসিন্দা বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নেই প্রায় পাঁচ মাস হলো। এলাকায় মশার প্রকট বেড়েছে, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ আর ময়লা। তবে তার সচিব টিপু নিয়মিত কার্যালয়ে থাকেন। সনদের প্রয়োজনে তিনি সময় নিয়ে তা করে দেন। তবে কাউন্সিলরের স্বাক্ষর তিনি কোথা থেকে আনেন এটা তিনি ভালো বলতে পারবেন।
বিজ্ঞাপন
তারা আরও বলেন, কাউন্সিলর না থাকায় আমাদের বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও তা তাকে জানাতে পারছি না। সচিব তো আর সব দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। আর নগর ভবনে সরাসরি মেয়রকে কিংবা নগর প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নাগরিক সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, ওয়ারিশ সনদ, পাসপোর্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও ক্ষেত্রবিশেষে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে কাউন্সিলরের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। তবে এসব জরুরি সনদে নাগরিকরা কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে স্বাক্ষর পায় না। জমা দিয়ে যাওয়ার পর তারা এসব পায়। কীভাবে স্বাক্ষর হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। এদিকে সাধারণ কাউন্সিলর কার্যালয়ে উপস্থিত না থাকায় এর প্রভাব পড়ছে ওই ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ওপর।
কাউন্সিলর খোরশেদ আলম খন্দকারের ব্যক্তিগত সচিব আলী সাবাব টিপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাউন্সিলর খোরশেদ আলম খন্দকার আত্মগোপনে আছেন, বিষয়টি সঠিক নয়। তিনি এর আগে বেড়াতে গিয়েছিলেন, আর সদ্য তিনি ওমরা হজ পালন করেছেন। তাই কিছু দিন তিনি কার্যালয়ে ছিলেন না। আর কোনো কাউন্সিলর তো ২৪ ঘণ্টা অফিস করবেন না।
তিনি আরও বলেন, তার অবর্তমানে সম্প্রতি এই ওয়ার্ডের সব ড্রেনের বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়েছে। কিছুদিন আগে মশার উপদ্রব বেড়েছে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কাউন্সিলরের নিজ ব্যবস্থাপনায় মশার ওষুধ স্প্রে করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। মশক নিধন কার্যক্রম আমাদের রুটিন ওয়ার্ক।
কিন্তু কাউন্সিলর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, আপনি জানেন কাউন্সিলর খোরশেদ নারায়ণগঞ্জের অন্যতম জনপ্রিয় কাউন্সিলর। করোনার মহাদুর্যোগে তিনি স্মরণীয় আবদান রেখেছেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মাননা প্রদান ও পুরস্কৃত করা হয়েছে। তার জনপ্রিয়তাকে ম্লান করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব মামলা করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। তবে মামলা আইনি বিষয়। এটা আইনিভাবেই মোকাবিলা করবেন তিনি।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর খোরশেদ আলমের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত মোবাইলে নম্বরে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ জন্য তার কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
কাউন্সিলর না থাকায় ওয়ার্ডের জনগণ কীভাবে সেবা পাচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আবুল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। আপনি নগর ভবনে আসেন, অফিশিয়ালি কথা বলব। ওই মুহূর্তে নগর ভবনে আসব কি না, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি ছুটিতে আছি, আজ নয়, অন্য কোনো দিন আসেন। তবে ফোনে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলে ফোন রেখে দেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৬ মে ফতুল্লা মডেল থানায় ব্যবসায়ী সাইদা আক্তার নামে এক নারী কাউন্সিলর খোরশেদ আলম খন্দকার ও রেহানা আক্তার নামে এক নারীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছিলেন। এরপর ২৫ আগস্ট খোরশেদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলা করেন খোরশেদের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা সাইদা আক্তার। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআই তদন্ত করে খোরশেদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
এরপর খোরশেদকে গ্রেপ্তার করতে আদালত ওয়ারেন্ট ইস্যু করলে হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তবে নির্বাচনের দুই দিন আগে গত ১৪ জানুয়ারি সেই জামিন আদেশের মেয়াদ শেষ হলেও আত্মসমর্পণ করেননি খোরশেদ।
ওই মামলায় পুলিশ কাউন্সিলর খোরশেদ ও রেহানা আক্তারকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। এ মামলায় আদালত চার্জ গঠন করেছে বলে আদলত সূত্রে জানা গেছে।
এনএ