শ্রেষ্ঠ ইউপি সদস্যের পুরস্কার নিচ্ছেন নিচ্ছেন স্বপন হাওলাদার

বরগুনার তালতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য (মেম্বার) স্বপন হাওলাদার (৪৫) এখন চায়ের দোকানদার। চা বিক্রি করে সংসার চালান দুবারের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত এই ইউপি সদস্য।

২০১২ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সততার সঙ্গে জনসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় দুবার শ্রেষ্ঠ ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। পেয়েছেন দুবার স্বর্ণপদক। সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বপালন করা সাবেক এই ইউপি সদস্য এখন বসবাস করছেন অন্যের জমিতে। জীবিকার তাগিদে রিকশা চালিয়েছেন দীর্ঘদিন। করোনার কারণে রিকশা চালানো বাদ দিয়ে এখন চা বিক্রি করছেন।

দুর্নীতির সঙ্গে আপস না করা স্বপন হাওলাদার দীর্ঘদিন ধরে সরকারি জমিতে বসবাস করেছেন। সরকারি জমিতে থাকা তার ঘরটি বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভেঙে দিয়েছে উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষ। এরপর অন্যের জমিতে মাসহ পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে মাথা গোঁজার চেষ্টা করছেন তিনি।

সাবেক ইউপি সদস্য স্বপন হাওলাদার

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একসময়ের আলোচিত ইউপি সদস্য স্বপন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন। তাদের পাশে দাঁড়াতেন। সততার সঙ্গে দায়িত্বপালন করায় ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তাকে শ্রেষ্ঠ ইউপি সদস্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সেসময় পেয়েছেন স্বর্ণপদকও।

শত শত মানুষের উপকার করা এই ইউপি সদস্যের পাশে এখন নেই কেউ। অথচ জনপ্রতিনিধির পদকে পুঁজি করে লাখপতি হতে পারতেন স্বপন। পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে পারতেন সুখে। লোভ-লালসা দূর রেখে নিজেকে মানুষের জন্য বিলিয়ে দেওয়া এই ইউপি সদস্যের বসবাস এখন অন্যের জমিতে।

সামনে বর্ষা মৌসুম। ঝড়-বৃষ্টির সময়। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় স্বপন হাওলাদার। পরিবার নিয়ে কোথায় আশ্রয় নেবেন জানেন না তিনি।

স্থানীয়রা জানায়, জনপ্রতিনিধি থাকা অবস্থায় নিজেকে জনগণের সেবায় নিয়োজিত রেখেছিলেন স্বপন হাওলার। জনগণের অর্থেও ভাগ বসাননি তিনি। দিনে-রাতে সবসময় মানুষের উপকার করেছেন। স্থানীয়দের যেকোনো প্রয়োজনে সবার আগে এগিয়ে গেছেন এই ইউপি সদস্য।

সরকারি জমিতে থাকা ইউপি সদস্যের ঘরটি ভেঙে দিয়েছে উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষ

ওই এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, মেম্বার থাকা অবস্থায় সবসময় আমাদের পাশে থাকতেন স্বপন হাওলাদার। সবসময় স্বপন মেম্বার সততার সঙ্গে দায়িত্বপালন করেছেন। বুধবার তার থাকার ঘরটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন স্বপন মেম্বারের অবস্থা দেখে কষ্ট হয়। ইচ্ছা থাকলেও তার পাশে দাঁড়ানোর সাধ্য নেই আমার।

স্বপন হাওলাদারের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইউপি সদস্যের দায়িত্বপালন শেষে জীবিকার তাগিদে রিকশা চালানো শুরু করেন স্বপন হাওলাদার। লোকলজ্জায় তালতলী ছেড়ে দীর্ঘদিন রিকশা চালান ঝালকাঠি ও বরিশালে।

রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি লেখাপড়া করাচ্ছেন দুই ছেলে ও এক মেয়েকে। তার দুই ছেলে ইতোমধ্যে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এছাড়া ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে গোল্ডেন এ-প্লাস পাওয়া একমাত্র মেয়ে তালতলীর একটি স্কুলে পড়াশোনা করছে ১০ম শ্রেণিতে।

জীবন সংগ্রামের কথা জানিয়ে সাবেক ইউপি সদস্য স্বপন হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে আমি সবার পাশে ছিলাম। সততার সঙ্গে দায়িত্বপালনের চেষ্টা করেছি। দায়িত্ব হস্তান্তর শেষে জীবিকা নির্বাহের জন্য লোকলজ্জার ভয়ে দূরে গিয়ে রিকশা চালিয়েছি। এখন চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছি। আমার একমাত্র সম্বল ছিল সরকারি জমিতে বসবাসের একটি ঘর। বুধবার সেটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। সরকারের কাছে আমি বসবাসের জন্য একটি ঘর চাই। এছাড়া আমার কোনো প্রত্যাশা নেই।

এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সাবেক ইউপি সদস্য স্বপন হাওলাদারের বসবাসের ঘরের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি ইতোমধ্যে আমি জেনেছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। স্বপন হাওলাদার যদি আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করেন তাহলে আমরা তাকে একটি সরকারি ঘর দেওয়ার চেষ্টা করব।

সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এএম