দেশব্যাপী আলোচিত পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ‘আচরণবিধি’ লঙ্ঘন করার অভিযোগে পাবনা-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সকে নির্বাচনী এলাকায় না যেতে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

শনিবার (১১ জুন) দুপুরে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা সদর উপজেলা নির্বাচন কমিশনার ও ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা কায়সার মোহাম্মদ।

রিটার্নিং কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত শুক্রবার (১০ জুন) রাতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকারের সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা বা নির্বাচন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর বিধি ২২ এর (১) ও (২) অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মাননীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করতে আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হলো। 

আগামীকাল রোববার (১২ জুন) নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদ খানের নির্বাচনের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। এর আগে গত ৩ জুন সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়নের খতিব আব্দুল জাহিদ উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ মাঠে বিদ্যালয়ের ভবন উদ্বোধনের ব্যানারে নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদ খানের নির্বাচনী সভায় নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন তিনি। 

এ সময় তিনি বলেন, 'বিদ্যালয়ের ভবন উদ্বোধন করলেও মূল আকর্ষণ কিন্তু নির্বাচনী জনসভা। আগামী ১৫ জুন নৌকাকে বিজয়ী করে জননেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি। গত ২৬ ডিসেম্বর সদরের ৯টি ইউনিয়নে নৌকার পরাজয় হলেও ভাঁড়ারাতে নৌকাতে জিততে হবে। নৌকাকে জেতানোর জন্য আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়ুন।' 

এই সভার পর পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের নৌকার বিদ্রোহী ঘোড়া মার্কা প্রতীকের সুলতান মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, এমপি সাহেব খতিব জাহিদ উচ্চবিদ্যালয়ের বিল্ডিং উদ্বোধনের নামে নির্বাচনী সভা করে গেছেন। নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। সভায় অন্তত দুই-তিন হাজার মানুষ হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী তিনি এভাবে তো সভা করতে পারেন না। তার উপস্থিতিতে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা আমাদের নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে বক্তব্যও দিয়েছেন।

এ বিষয়ে পাবনা সদর-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, হ্যাঁ, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমি যেহেতু ঢাকায় রয়েছি, সেহেতু চিঠিটি আমার লোকজন রিসিভ করেছে। সম্প্রতি সেখানকার একটি স্কুলের প্রোগ্রামে আবু সাঈদ খান এসেছিল। যেহেতু সে দলীয় প্রার্থী এবং দলীয় পদে রয়েছে, সেহেতু নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে হয়তো অন্য প্রার্থীরা অভিযোগ দিয়েছিল। ফলে নির্বাচন কমিশন এই চিঠি দিয়েছে। সংসদ সদস্য হলেও আমি আইনের ঊর্ধ্বে নই।

পাবনা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কায়ছার মোহাম্মাদ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধিতে উল্লেখ আছে, সরকারের সুবিধাভোগী ও অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না বা অংশ নিতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়েছি। চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় না যেতে অনুরোধ করা হয়েছে।

পাবনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। একজন এমপি এভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সমাবেশ বা নির্বাচনী অনুষ্ঠানে ভোট চাইতে পারেন না। গত ৩ জুন একটি বিদ্যালয়ে বিল্ডিং উদ্বোধন করতে গিয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে জানানো হলো এমপি মহোদয়কে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ইউপি নির্বাচনী প্রচারণার সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সাঈদ খানের (৫২) সঙ্গে সংঘর্ষে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম (৩৫) নিহত হন। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সব পদের নির্বাচন স্থগিত করে ইসি। পরে গত ২৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন থেকে আগামী ১৫ জুন নির্বাচন করতে তফসিল ঘোষণা করা হয়।

রাকিব হাসনাত/এনএ