কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মালিয়াট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ্যপ্রহরী হারুন অর রশিদ যৌনপীড়ন মামলার আসামি। সম্প্রতি মামলার বাদীর সঙ্গে আঁতাত করে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন তিনি। জামিন পেয়ে কর্মস্থলে ফিরতে চেয়েছিলেন।

এদিকে তার কর্মস্থলে ফেরার খবর পেয়ে অভিভাবকরা বিদ্যালয় ঘেরাও করেন। শনিবার (১১ জুন) সকালে প্রায় শতাধিক অভিভাবক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একটি শ্রেণিকক্ষে অভিভাবকদের বসিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।

অভিভাবকরা বলেন, হারুন যৌন নিপীড়ন মামলার আসামি। সে স্কুলে থাকলে আমরা এই স্কুলে সন্তান পড়াব না। স্কুলটি এলাকার। আপনারা স্কুলের স্যার। আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু হারুন স্কুলে আসতে পারবে না। এটাই আমাদের শেষ কথা।

মামলার এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (২০ মে) সকালে মালিয়াট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রকে স্কুলে ডেকে এনে যৌন নিপীড়ন করে দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী হারুন অর রশিদ। এ ঘটনায় পরের দিন শনিবার (২১ মে) থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ছাত্রের বাবা। পরে ওই দিন রাতেই থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা হয়।

আরও জানা গেছে, গত ৩০ মে সোমবার যৌন পীড়নকারী হারুনকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেন এলাকাবাসী। কিন্তু মামলার বাদী গোপনে আসামির সঙ্গে আঁতাত করে অর্থের বিনিময়ে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে আসামি জামিন লাভ করে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবক বলেন, অর্থের বিনিময়ে নৈশ্য প্রহরী হারুন মামলার মীমাংসা করেছে। কিন্তু আমরা হারুনকে মানি না। সন্তানের নিরাপত্তার জন্য হারুনের চাকরিচ্যুত চাই। তা না হলে সন্তানদের স্কুলে পড়াব না।

বিষয়টি জানতে নৈশ্য প্রহরী হারুন অর রশিদের মুঠোফোনে কল দেওয়া হয়। কিন্তু ফোনটি বন্ধ থাকায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মামলার বাদীর নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

মালিয়াট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিরোজ হোসেন বলেন, আজ অভিভাবকরা এসেছিল। তাদের সাথে কথা বলেছি। তাদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে পরে কথা বলব। এ বিষয়ে আপাতত কিছু বলতে চাচ্ছি না।

বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মানিক হোসেন বলেন, আমি একটি চাকরি করি। তাই বাইরে ছিলাম। খবর পেয়েছি অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের এসেছিল। তারা দাবি করেন হারুন থাকলে স্কুলে বাচ্চা পড়াবেন না। তিনি আরও বলেন, মামলার বাদী আসামির সাথে মিটমাট করে নিয়েছে। একটা লিখিত মীমাংসার কাগজ স্কুলে দিয়েছে।

মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) লিটন চন্দ্র দাস বলেন, বাদী আদালতে মীমাংসার কথা বলায় আদালত আসামিকে জামিন দিয়েছেন। এ ধরনের অপরাধ মীমাংসার যোগ্য নয়। আমি খুব দ্রুতই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেব।

কুমারখালী উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, স্কুলের শান্তি রক্ষায় ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ ধরনের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।

রাজু আহমেদ/এনএ