অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়ার পর এবার নতুন বগি নিয়ে রেলপথ পাড়ি দিচ্ছে পারাবত এক্সপ্রেস। রোববার (১২ জুন) দুপুরে নতুন তিনটি বগি নিয়ে পারাবত এক্সপ্রেস শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করে। শনিবার রাতে সিলেট রেলস্টেশন থেকে নতুন বগি সংযোজন করে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। আজ ভোরে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে আসে ট্রেনটি।

শমসেরনগর রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার জামাল উদ্দিন জানান, শনিবারের দুর্ঘটনায় সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল পায় পাঁচ ঘণ্টা। দুর্ঘটনার কারণে কুলাউড়ার লংলা স্টেশনে ঢাকাগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস শ্রীমঙ্গল স্টেশনে আটকা পড়ে। এ ঘটনায় সব মিলিয়ে প্রায় চার হাজার যাত্রীকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

পারাবত এক্সপ্রেস সূত্র জানা যায়, পাওয়ার কার থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে পারাবত এক্সপ্রেসের একটি সাদা চায়নিজ এসি চেয়ার, একটি ইনকা এসি চেয়ার ও ইনকা পাওয়ার কার পুড়ে যায়। আজ নতুন করে দুটি এসি চেয়ার ও পাওয়ার কার সংযোজন করা হয়েছে। সেগুলো হলো ইনকা এসি চেয়ার ১৩৩৭, সাদা চায়নিজ এসি চেয়ার ৬৫১৪, ইনকা পাওয়ার কার ১১০৪।

যাত্রীদের অভিযোগ, পারাবত এক্সপ্রেসের আগুন নেভানোর অত্যাধুনিক কোনো ব্যবস্থা ছিল না ট্রেনে। আগুন না নিভিয়েই রেলকর্মীরা তড়িঘড়ি করে ট্রেন থেকে নেমে পড়েন। যাত্রীদের উদ্ধারে প্রথমে এগিয়ে আসেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। এ সময় ভয়ে লাফ দিতে গিয়ে চার-পাঁচজন আহত হয়েছে।

পতনউষা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিরাজ খান বলেন, আগুন লাগার বিষয়টি দেখে স্থানীয়রা ছুটে যায়। যাত্রীরা ভয়ে লাফ দিতে গিয়ে চার-পাঁচজন আহত হয়। কিন্তু আগুন লাগার পর রেলের কাউকে এগিয়ে আসতে দেখিনি। এ ছাড়া রেলে ছিল না আগুন নেভানোর কোনো যন্ত্র।

দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটির যাত্রী সাদেক মিয়া বলেন, ট্রেনটি শ্রীমঙ্গল ছাড়ার পর থেকেই পাওয়ার কারে সমস্যা হচ্ছিল। ট্রেনে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা ছিল না। চোখের সামনে রাষ্ট্রীয় সম্পদ পুড়ে শেষ হলো।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ওই ট্রেনে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ছিল। শুরুতে ফায়ার এক্সটিংগুইসার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিল রেলের লোকজন, কিন্তু আগুন নেভেনি। তাই বগিগুলো পুড়ে যায়।

মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, যাত্রীরা আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯-এ কল করেন। কমলগঞ্জসহ ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রেনের পাওয়ার কার বগিতে জেনারেটর থেকে আগুনের সূত্রপাত।

প্রসঙ্গত, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমসেরনগরের বিমানঘাঁটি এলাকায় শনিবার দুপুর ১টার দিকে ট্রেনের এসি বগিতে আগুন লাগে। এতে ঢাকা-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট। তবে এর আগে পুড়ে যায় তিনটি বগি। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বিকেল ৬টায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

ওমর ফারুক নাঈম/এনএ