বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ব্রিজ স্কেলে অভিনব কায়দায় ওজন কম-বেশি করে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বন্দরে চলছে উত্তেজনা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকে একটি চক্র অর্থের বিনিময়ে ব্রিজ স্কেলে পণ্য ও পরিবহনের মাপ কম-বেশি করছে। এতে অনেক ব্যবসায়ী এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট পথে বসছেন। পুজি হারানোর পাশাপাশি রাজস্ব খাতেও দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। 

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে হাতে-নাতে ধরা পড়ার পর দুই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। যুক্তিযুক্ত সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসায়ী এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছেন।

জানা গেছে, এই স্থলবন্দরে রয়েছে দুইটি ডিজিটাল ব্রিজ স্কেল। ভারত, নেপাল, ভূটান এবং বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিযোগ্য মালামাল এবং পরিবহনের ওজন এই দুই স্কেলেই পরিমাপ করা হয়। ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রতিদিন ৫ শতাধিক ট্রাকে হাজার হাজার টন মালামাল পরিমাপের কাজ করেন নির্ধারিত কর্মচারিরা। অভিযোগ উঠেছে ঘুষের বিনিময়ে ওজন স্কেলে পরিমাপ কমবেশি করেন বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। এ ঘটনায় গত ১৩ জুন হাতে-নাতে ধরা পড়ে দুই কর্মচারী।
 

ব্যবসায়ী এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, বন্দরে দীর্ঘদিন ধরেই এই ডিজিটাল কারচুপি চলছে। ভারত, নেপাল, ভূটান থেকে যখন মালামাল আমদানি করা হয় তখন কোনো কোনো ট্রাকের মালামাল ওজন স্কেলে পরিমাপে কম হয়। কিন্তু ওজন স্কেলে কম পাওয়া মালামালের পরিমাণ পরিবহনের ওজন বাড়িয়ে ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে সমান করে দেওয়া হয়। এই মালামাল যখন আমাদানিকারকের নিজস্ব স্কেলে পরিমাপ করা হয় তখন কয়েক টন কম হয়ে যায়। কিন্তু এলসির মাধ্যমে পুরো মালামালের টাকা আগেই রপ্তানিকারকের একাউন্টে পাঠানো হয়। 

দীর্ঘদিন ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও কারচুপির ঘটনা কেউই ধরতে পারছিল না। চোখে ধুলো দেওয়ার মতো এ ঘটনা হঠাৎ ফাঁস হয় ভারতের আসাম থেকে আসা এক ট্রাক ড্রাইভারের মাধ্যমে। আব্দুল মোতালেব নামে ওই ড্রাইভার জানান, তার ট্রাকে মালামাল কম হয়েছিল। কিন্তু ওজন স্কেলের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মচারি যান্ত্রিকভাবে তা ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। 

এ জন্য তিনি তার কাছে ৩শ টাকা ঘুষ চান। পরে তাকে ১শ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। ঘটনাটি ফাঁস হওয়ার পর ওই ট্রাকটি নিজস্ব স্কেলে পরিমাপ করা হলে প্রায় ১ টন ভুট্টা কম হয়। পরে আমদানিকারক এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা কর্তৃপক্ষকে জানালে দুই স্কেল অপারেটর আরিফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
 
আমদানিকারক শামীম হোসেন বলেন, অনেক আশা ও অল্প পুঁজি নিয়ে আমদানি শুরু করেছিলাম। প্রায়ই আমার আমদানিকৃত মালামাল কম হতো। আমি বুঝতে পারিনি। আমি পথে বসে গেছি। এখন বুঝছি এটা ডিজিটাল ব্রিজ স্কেলের কারসাজি। এর সাথে বন্দরের অনেকেই জড়িত। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। শ্রমিকরা বলছেন জড়িত না থাকলেও অনেক সময় চুরির দায়ে অভিযুক্ত করা হতো শ্রমিকদের।
 
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ন আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, পরিমাপে কম হওয়া মালামালের জন্যও নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার আগেই পাঠাতে হয়। ফলে রেমিটেন্স বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অন্যদিকে এ ঘটনায় লভ্যাংশ পাওয়া তো দুরে থাক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের লোকশান গুনতে হয়। আমরা এর যুক্তিযুক্ত সমাধান চাই। প্রতিটনে ২ থেকে ৫শ কেজি কম হয়। একজন আমদানিকারক কম করে ৩০ থেকে ৫০ টন মালামাল আমদানি করেন। প্রতি এলসিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা হাওয়া হয়ে যায়।

বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের পোর্ট ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ জানান, আপাতত জড়িতদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে।   

আরআই